স্টেশনারি দোকান ব্যবসা আইডিয়া, অনলাইন সেবা ও ফটোস্টুডিও দোকান দিতে কি কি লাগে?

স্টেশনারি দোকান ব্যবসা আইডিয়া, অনলাইন সেবা ও ফটোস্টুডিও দোকান দিতে কি কি লাগে?

Information

অনলাইন ছাড়াও অফলাইনে নানা ধরণের ব্যবসাপাতি করা যায়। এরই মধ্যে আছে নানা ধরণের ব্যবসা। তবে এ দুটো একসাথে যে সকল কাজ করা যায় এসকল তালিকা রয়েছে তার মধ্যে স্টেশনারি দোকান ব্যবসা, অনলাইন সেবা ও ফটোস্টুডিও দোকান অন্যতম। কেননা এসকল ব্যবসার দোকানপাতি ভালো পজিশনে নিয়ে বসলে এ থেকে বাড়তি আয়ের সুযোগ ও কাঙ্খিত কাস্টোমার পাওয়া যায়।

যে কোনো ধরণের ব্যবসার শুরুতে থাকা চাই পজিশন। পজিশনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা প্রারম্ভিক শুরুর দিকটায় টার্গেট মতো কাস্টোমার পাবার ক্ষেত্রে অনেকেই পিছিয়ে থাকেন। তাই ব্যবসা স্থাপনার পজিশন সবচেয়ে ভালো হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, জনবহুল চৌরাস্তায় সেট করলে। এতে ব্যবসায়িক প্রসার দ্রুত বৃদ্ধি পায়, কাঙ্খিত কাস্টোমার পাওয়া যায়।

মূলত এ সকল ব্যবসায় লসের হিসাবের খাতা থেকে লাভের পাল্লাই ভারী। শহর-গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ আনাচে-কানাচে দোকান নিয়ে সহজেই স্টেশনারি দোকান ব্যবসা, অনলাইন সেবা ও ফটোস্টুডিও দোকান দেওয়া যায়।

এই পোষ্টের বিষয়সমূহ

দোকান নির্বাচন করবেন যেভাবে

একটা দোকান হলেই হলো ব্যাপারটা এমন নয়। দোকানের অবস্থান যেনো বিশেষত পাবলিক প্লেসে হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে আপনার পণ্য বিক্রি ও সেবার পরিধির সুযোগ বাড়বে। আর তাই দোকান নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্থানটুকুকে প্রাধান্য দিতে হবে। যে সকল স্থানে দোকান স্থাপনার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিবেন তা হলো-

১. বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান (অর্থাৎ স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, ল্যাঙ্গুয়েজ বা ভাষা শেখার প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার) এর পাশ্ববর্তী।

২. বিভিন্ন সরকারি-বেসকারি অফিস কার্যালয়ের সামনে।

৩. পাসপোর্ট অফিস/ভিসা অফিস/ ট্রাভেলস এন্ড ট্যুর অফিস/ নির্বাচন অফিসের কাছাকাছি।

৪. বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আশেপাশে।

৫। বাস, ট্রেন, বিমান, নৌ বন্দরের কাছে।

৬। শহর বা গ্রামের বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বাজারের মধ্যে।

৭। শহরের প্রাণকেন্দ্রে বিশেষত যেখানে গার্মেন্টস কারখানা প্রসিদ্ধ এলাকায়।

৮। বিভিন্ন সরকারি-বেসকারি ব্যাংকের আশেপাশে।

৯। ঘনবসতি বহুল এলাকায় যেখানে লোকসমাগম বেশি।

১০। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বা হাইকোর্ট প্রাঙ্গন, সাব-রেজিস্টারি অফিস, ভূমি অফিস বা সরকারি অফিস,  বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বীমা, এনজিও অফিসের কাছাকাছি।

এছাড়াও দোকানের স্থান নির্বাচনে ক্ষেত্রে বিভিন্ন আবাসিক এলাকাকগুলোর মোড়গুলোতে মোড়ে, গ্রামের ছোট ছোট হাট-বাজারগুলোতে যেখানে লোকদের ভীড় লেগে থাকে সেখানেও দোকান দিতে পারেন। যদিওবা পূর্বে সেখানে দোকান থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। তবে দোকান বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বড়সড় স্পেস দেখে নিবেন।

এক্ষেত্রে দোকানের সামগ্রী ও ডেকোরেশন যথাযথভাবে সেট করা যায়। দোকান স্থাপনার সামনে পার্কিং জোন বাছাই করবেন, এতে দোকানের সামনে ব্যানার বা ফেস্টুস দিয়ে আপনি কি কি সেবা দিচ্ছেন তার তালিকা তুলে ধরতে পারেন। এতে আপনার কাঙ্খিত কাস্টোমার পাবেন এবং যথাপোযুক্ত সেবা গ্রহীতাকে ভালো সেবা দিতে সমস্যা হবে না। দোকানের পরিধি বড় হলে লোকবলও নিয়োগ দিতে পারেন।

ব্যবসায় দোকানের নাম নির্বাচন করবেন যেভাবে

দোকানের নাম অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ কেননা এখানে আপনি কি নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করবেন তার প্রাথমিক পরিচয় পাওয়া যায় দোকানের নাম ফলক দেখে। যদি আপনি শিক্ষা উপকরণ সামগ্রী বিক্রি করতে চান তাহলে স্টেশনারি সম্পর্কিত নাম বাছাই করবেন আবার অনলাইন সেবা দিতে গেলে সাইবার ক্যাফে কিংবা ডিজিটাল সম্পর্কিত নাম বাছাই করতে পারেন আবার ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণ, ব্যানার ও পোস্টার, এডিটিং সংক্রান্ত নিয়ে কাজ করতে চাইলে গ্রাফিক্স সংক্রান্ত নাম তালিকায় রাখতে পারেন।

যদি চান নিজের বা নিজ সন্তানদের নামে দোকান খুলতে, তাহলে নামের আগে বা পরে আপনি কি সংক্রান্ত সেবা দিয়ে ব্যবসায়িক দোকান খুলবেন তা লিখে বাছাই করতে পারেন। যেমন-

  • রহমান ডিজিটাল ফটোস্টুডিও এন্ড গ্রাফিক্স জোন।
  • রনি স্টেশনারি হাউজ।
  • মা টেলিকম এন্ড অনলাইন জোন।
  • আলোছায়া কম্পিউটার এন্ড কালার ল্যাব।
  • প্রজাপতি ডিজিটাল স্টুডিও।
  • মাহি কম্পিউটার এন্ড ফটোস্ট্যাট।
  • ইত্যাদি ডিজিটাল অনলাইন সেবা।
  • জালাল স্টেশনারি এন্ড কম্পিউটার পয়েন্ট।
  • রূপায়ন অনলাইন কর্ণার।
  • ক্লাসিক কম্পিউটার পয়েন্ট।
  • দ্যা সার্ভিস পয়েন্ট।
  • দেশ কম্পিউটার সেন্টার।
  • জনতা স্টুডিও কর্ণার।
  • রিতা ও মিতা অনলাইন ঘর।
  • এবিসি কম্পিউটার সেন্টার।
  • এইচ টু ও গ্রাফিক্স ডিজাইন।
  • অরবিট কম্পিটার ল্যান্ড।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আপনার ব্যবসায়িক দোকানের নাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইউনিক ও সহজবোধ্য নাম বাছাই করার চেষ্টা করবেন। কোনোরূপ কপি বা হুবহু বড় কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম দিবেন না। এতে হিতে বিপরীত হবে বা মামলা সংক্রান্ত ঝামেলায় পড়তে পারেন।

তাই দোকানের নাম বাছায়ের কাজে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। আপনার ব্যবসায়িক দোকানের নাম সুন্দর শ্রুতি মধুর হলে লোকেরা সহজে মনে রাখতে পারবে। এজন্য আপনাকে আকর্ষণীয় আর ইউনিক নাম বাছাইয়ের দিকে ফোকাস দিতে হবে যাতে ক্রেতা ও সেবা গ্রহীতার মনে গেঁথে থাকবে এবং আকর্ষণ বোদ জন্মাবে। মনে রাখবেন, একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সফল হবার পেছনে দোকানের নাম যতই ইউনিক হবে ব্যবসায় সাফল্য ততোই অগ্রসর হবে। একসময় এই নামে একটি ব্র্যান্ড তৈরি হবে, যার গুরুত্ববহ ও তাৎপর্য অনেক।

আরেকটি কথা, ব্যবসায়িক দোকানের নাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আপনার মনের মধ্যে যতো আইডিয়া আসুক না কেনো একটি খাতায় নোট করুন এবং সময় দিন আপনার কাঙ্খিত নাম খু্ঁজে পেতে। নাম নির্বাচনের সময় ইংরেজি ও সাবলীল শব্দ বাছাইয়ে নজর দিন। কেননা ইংরেজি নাম সকলেরই বেশি মনে থাকে যতটা না বাংলা নামের দোকানের নাম মনে থাকে।

অনেক সময় দেখা যায় যে নাম বাছাই করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, এজন্য আপনি অন্যদেরও সহযোগিতা নিতে পারেন। এতে দোকানের নাম বাছাইয়ে আরও ভালো ভালো নামের আইডিয়া খুব সহজেই পাবেন।

দোকানের ডেকোরেশনে যা রাখবেন

দোকানকে আকর্ষণীয় ও সুন্দর করে গড়ে তুলতে ডেকোরেশনে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। এতে ক্রেতারা আকৃষ্ট হবে এবং আপনার সেবার মান নিয়ে তাদের মনে  সামগ্রীক অনুমান পজিটিভ হবে। দোকানের ভেতরের পরিবেশের মান ভালো রাখার চেষ্টা করবেন যাতে দোকানের মধ্যে বায়ু চলাচল করতে পারে এবং বাহিরের ধুলোবালি ভিতরে যেন না প্রবেশ করতে পারে তাই থাই-গ্লাস লাগিয়ে নিতে পারেন। তাই অহেতুক কোনো সরঞ্জামাদি রাখবেন না যাতে ক্রেতারা বা সেবাগ্রহীতারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে সে ব্যবস্থার প্রতি জোড় দিতে হবে।

যদি দোকান ছোট-খাটো হয় তাহলে হালকা আঙ্গিকে ডেকোরেশন করলেই চলবে। আর শহুরে পরিবেশে আপনার বাজেট ও মান অনুযায়ী দোকান সাজাতে পারেন। এক্ষেত্রে চেয়ার, টেবিল, ফ্যান, বাল্ব, রঙ্গিন লাইটিং, ফুলদানি, কার্পেট, পাপোশ, বাংলা ও ইংরেজি ক্যালেন্ডার, প্রকৃতি ও ফুলের ব্যানার বা ফ্রেম, আপনার সাম্প্রতিক কাজের ডেমো, আপনি কি কি সেবা দিচ্ছেন তার একটি তালিকাক্রম দোকানের ভিতর টানিয়ে দিতে পারেন।

একটি স্টেশনারি ও অনলাইন সেবাদানের দোকান দিতে কি কি লাগবে

আপনার লক্ষ্য যখন স্টেশনারি বিষয়ক দোকান নিয়ে তখন দোকানে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরুর প্রাথমিক দিকে যা যা লাগবে তা হলো-

শিক্ষা উপকরণ সামগ্রীর মধ্যে

  • গাইড বই/ সহায়ক বই।
  • ডকুমেন্ট হোল্ডার।
  • সাধরণ খাতা, প্রাক্টিক্যাল খাতা।
  • গ্রাফ পেপার।
  • নানা সাইজ ও আকারের সাদা এবং রঙ্গিন পেজ।
  • কলম।
  • পেন্সিল।
  • পেন্সিল বক্স।
  • জ্যামিতি বক্স।
  • পেন্সিল কাটার।
  • ইরেজার।
  • স্কচটেপ।
  • পেপার ক্লিপ।
  • রুলার।
  • স্ট্যাপলার।
  • ক্যালকুলেটর।
  • হাইলাইটর পেন।
  • পানির বোতল।
  • গ্লু।
  • কাঁচি।
  • সুঁই-সুতো।
  • কলমদানি।
  • ফুলদানি।
  • স্টিকার।
  • বোর্ড।
  • চক।
  • ফাইল।
  • ক্যালেন্ডার।
  • ম্যাপ ইত্যাদি।

এছাড়াও ছোট্ট একটি স্টেশনারি চালাতে নিত্য ব্যবহার্য পণ্য দোকানে সংগ্রহে রাখা যায়। সেই তালিকায় ইলেক্ট্রনিক আইটেম সমূহ যেমন- চার্জার লাইট, ব্যাটারী, চার্জার, হোল্ডার, টেষ্টার, প্লাস, হাঁতুড়ি, স্ক্রু, পিন, পেরেক ইত্যাদি ছোট ছোট আইটেম।

ব্যবসা ও অফিসের উপকরণ সামগ্রীর মধ্যে

  • স্ট্যাপলার মেশিন।
  • হোল পাঞ্চ মেশিন।
  • কাঁচি।
  • ডকুমেন্ট ক্ল্যাম্প।
  • পেন হোল্ডার।
  • স্টিকি নোট।
  • মার্কার পেন।
  • পুশ পিন।
  • রাবার স্ট্যাম্প।
  • হাইলাইটর।
  • মার্কার।
  • ট্যাপ।
  • লেবেল।
  • পাঞ্চ ফাইল।
  • গাম।
  • গ্লু।
  • খাম।
  • ফটোকপি ম্যাটেরিয়ালস।
  • প্রিন্টার উপাদান।
  • ফটোকপি মেশিন।
  • প্রিন্টার।
  • স্ট্যম্প পেপার।
  • পেপার কাটার ইত্যাদি।

কম্পিউটার ও অনলাইনইন ভিত্তিক স্টুডিও, মোবাইল ব্যাংকিং ও অন্যান্য সেবা প্রদানের জন্য প্রাথমিকভাবে দোকানে যা যা লাগবে তা হলো-

  • কম্পিউটার ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ।
  • সচল ডিজিটাল ফটোকপি মেশিন।
  • ফটো প্রিন্টার (কালার প্রিন্ট)।
  • ডিজিটাল ক্যামেরা/ আপডেট স্মার্টফোন।
  • লেজার প্রিন্টার (সাদাকালো প্রিন্ট)।
  • সচল ব্যবসায়িক মোবাইল নাম্বার।
  • wifi ইন্টারনেট কানেকশন।
  • লেমিনেটিং মেশিন।
  • স্পাইরাল বান্ডিং মেশিন।
  • সাবলিমেশন প্রিন্টার।
  • হিট প্রেস মেশিন।
  • আইপিএস।
  • বৈধ ব্যবসায়িক ট্রেড লাইসেন্স ইত্যাদি।

কম্পিউটার ও অনলাইনইন ভিত্তিক কাজ পরিচালনা, ফটো স্টুডিও, মোবাইল ব্যাংকিং ও অন্যান্য সেবা দেওয়ার দোকান দিতে হলে যা যা জানা থাকতে হবে তা হলো-

  • মাইক্রোসফট অফিস ওয়ার্ড, এক্সেল ইত্যাদি। মূলত এ সকল কাজ অফিসিয়াল যেকোনো কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পড়ে। তাই এ দুটো কাজের প্রতি গুরুত্ব দিলেই চলবে।
  • ব্যবসা সচল ও কাস্টোমারের মন ধরে রাখতে সময় মতো সময়ের কাজ দ্রুত করতে হবে এবং তা হতে হবে নির্ভূল। এজন্য কম্পিুটারে ডকুমেন্ট টাইপিং স্পিড যতো ভালো হবে ততো ভালো তবে ব্যবসা হবে। ব্যবসা শুরুর দিকে টাইপিং স্কিল সর্বোচ্চ ২০ ওয়ার্ড করে বাংলা ও ইংরেজিতে দক্ষ থাকতে হবে। এতে করে কাস্টোমারের যে কোনো কাজ দ্রুততার সাথে জমা দেওয়া যাবে।
  • ফটোশপের কাজ হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ব্যবসার শুরুতে আপনি বেশি দক্ষ না হলেও মোটামুটি ফটোশপে ৮০% দক্ষ থাকতেই হবে। বর্তমানে কম্পিউটার দোকানগুলোতে ছবি দ্বারা অনেক অফিসিয়াল কাগজ পত্র একমাত্র ফটোশপের দ্বারাই সাবমিট করতে হয়। তাই প্রাথমিক অবস্থায় এই কাজ জানা জরুরী।
  • থাকতে হবে ইন্টারনেট সম্পর্কিত ব্যসিক নলেজ। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে আপনার নানা কাজের মধ্যে ইন্টানেট ব্রাউজিং নিয়ে ভালো ধারণা থাকতে হবে। তাই এ বিষয়ে আপনার অবশ্যই শতভাগ নেট ব্রাউজিং এর কাজ জানা থাকতেই হবে। যাতে দ্রুত ও খুব সহজেই অজানা এবং দরকারি তথ্য উপস্থিত সময়ে বের করে নিতে পারেন আর অনলাইনের যাবতীয় কাজসমূহ নির্ভূল ও সঠিক পন্থায় সম্পন্ন করতে পারেন।
  • ফরমেট বা ফাইল দেখে বুঝতে হবে এটি কোন ক্যাটাগরীর ফাইলে রয়েছে। তাই ব্যসিক পড়াশোনা জানা থাকাটা দরকার এতে ইংরেজি লেখা বুঝতে সহজে পারা যায়। আবার কোনটি কোন কোন ফাইলে কি পরম্যাটে করা রয়েছে এবং কোন ফরম্যাটে করতে হবে তা যেন দেখা মাত্রই বুঝে নিতে পারা যায় তাই এ ব্যাপারে দক্ষতা অবশ্যই থাকতে হবে। যেমন- PDF, PSD, DOC, DOCX, DIF, ISO, JAR, Excel, PNG, JPG, JPEG, GIF, ZIP, ফরমেট সম্পর্কে ব্যসিক নলেজ থাকলেই কাজটা তেমন প্যারা নয়। সেই সাথে ফাইলগুলো এডিট করা, কোথাও যুক্ত করা শিখে নিতে হবে আবার এই সমস্থ ফাইল বর্তমান অবস্থা থেকে কনভার্ট করে গ্রাহকের কাঙ্খিন ফরমেটে নেওয়ার কাজ জানা থাকতে হবে। যেমনটা, পিডিফ ফাইল থেকে ওয়ার্ড ফাইলে আবার ওয়ার্ড ফাইল থেকে পিডিএফ ফাইলে ইত্যাদি। আবার ফাইলে কোনো ছবির সাইজ ছোট-বড় এবং সংযুক্ত করার কাজও জানা থাকা জরুরি। আসলে এসকল কাজে দারুণ কৌশলি হওয়া দরকার।
  • ইমেইল করে কাঙ্খিত ঠিকানায় বার্তা আদান-প্রদান, দরকারি ছবি পাঠানো ও গ্রহন করা, যে কোনো ধরণের ফাইল পাঠানো ও সংগ্রহ করকরা এগুলো বিষয়ক কাজ সাধরণত জানা থাকা প্রয়োজন।
  • প্রিন্ট করার কাজ একেবারের সহজ। যদি না জানা থাকে সহজে অভিঞ্জ কারো কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন কিংবা এ কাজ শিখতে ইউটিউবের টিউটোরিয়াল এক ঝলকে দেখে নিতে পারেন। মূলত এটা কোনো কঠিন কাজের মধ্যে পড়ে না কিন্তু যারা এ বিষয়টা জানেন না তাদের কাছে অনেক কিছু। আরেকটি কথা প্রিন্ট করার ক্ষেত্রে আগেই কাস্টোমারের কাছ থেকে জেনে নিবেন উনার কালার না সাদা কালো প্রিন্ট দরকার। আবার বিভিন্ন কাগজের আকার ও ডকুমেন্ট প্রিন্ট ভেদে সঠিক মাপে প্রিন্ট করা ব্যপারটাও জানা থাকা প্রয়োজন।
  • ব্যসিক ফটোকপি মেশিন চালানোতে দক্ষ থাকতে হবে। নয়তো ফটোকপি চালনায় অদক্ষ হলে আপনার লাভের চেয়ে ক্ষতির হিসাব গুণতে হবে।
  • কম্পিউটারের তাৎক্ষণিক কোনো সমস্যা সমাধানে আপনাকে হতে হবে দক্ষ। যেমন দোকানে সামেনে কাস্টোমার থাকা অবস্থায় কম্পিউটারে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে তা সমাধানের পথ জানা না থাকলে আপনাকে কাস্টোমার হারাতে হবে। তাই  ছোট্ট কোনো সমস্যা দ্রুত সারিয়ে তুলতে কম্পিউটার নিজে ঠিক করতে পারার দক্ষতা অর্জন করে নিতে হবে।
  • কম্পিউটার দ্বারা অনলাইন মাধ্যমে কোন আবেদন কোথায় করতে হবে, আবেদন জমা দিতে কোনো কোন ডকুমেন্ট লাগবে তা পূর্ব থেকে জেনে নিতে হবে। না হলে কাস্টোমার হারাতে হবে। আপনি যদি পূর্ব থেকে এসব ব্যাপারো এক্সপার্ট হয়ে থাকেন তাহলে আপনার পক্ষে সবকিছু সামাল দেওয়ার হাতিয়ার থাকবে।
  • মোবাইল ব্যাংকিং ক্ষেত্রে থাকতে হবে বিশ্বস্থ ও দায়বন্ধতা। কাস্টোমারের সেবা প্রদানে এ বিষয়টি খুব স্পর্শকাতর। তাই মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় গ্রাহককে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে দেয়া, টাকা উত্তোলন এবং টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট পেশাদারিত্ব দেখাতে হবে। তাছাড়া মোবাইলে ফ্লেক্সিলোড ও ইন্টারনেট ও মিনিট রিচার্জে ভালো পারদর্শীতা থাকা দরকার। প্রয়োজন ভেদে দোকানের ভেতরে যেখানে সহজে দৃষ্টিগোচর হয় সেখানে এসব প্যাকেজের বা অফারের ব্যানার বা ফেস্টুন লাগিয়ে রাখতে পারেন। এতে করে কাস্টোমার সহজে তার পছন্দের প্যাকেজ নিতে পারে আর আপনিও সহজে তা প্রদান করতো পারেন সেই ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।
  • ভালো ও পারফেক্ট শর্ট নিতে ক্যামেরা চালানোতে দক্ষতা থাকতকতে হবে। কাস্টোমারের মন মতো আর কাঙ্খিত ছবি তুলতে আপনার থাকতে হবে ইউনিক আইডিয়া আর লাইটিং সম্পর্কিত জ্ঞান। তাই ক্যামেরা পরিচালনা আর দক্ষ ফটো শ্যুটে আপনাকে বিস্তর পারদর্শীতার ভূমিকায় উত্তীর্ণ থাকতে হবেই।
  • কম্পিউটারের মাধ্যমে কিভাবে পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ডিবি সাইজে ছবি ও প্রয়োজন মাফিক বিভিন্ন সাইজের ছবি কাস্টোমাইজ করা জানা থাকা দরকার। যেমন- 2R, LD, DSC, 3R, L, LW, KGD, 4R, KG, 4R, KG, 2LD, DSCW, 5R, 2L, 2LW, 6R, 8R, 6P, S8R, 6PW ইত্যাদির  কোনটার কি মাপ, কোনটার কতো Width × Height (mm) এবং কতোWidth × Height (in) এবং কিভাবে ছবিটি এডিট করে সুন্দর করা যায় বা দেখতে ভালো হয় এসকল টুকটাক জানা থাকতে হবে।

উপরিউক্ত বিষয়াদি ছাড়াও অনলাইনের কাজে আপনাকে  আরও বেশি পারদর্শিতা দেখাতে হবে। এতে করে কাস্টোমারের মনমতো সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে আর ব্যবসায়ের ক্ষেত্রটা প্রসার ও প্রচারণা বৃদ্ধি পাবে দ্রুতই। এক কথায় আপনাকে এসকল বিষয়ে দেখাতে হবে বসগিরি। কম্পিউটার চালনার ক্ষেত্রে আপনি দক্ষ নাবিক হলে আপনার নৌকায় যাত্রীদের গন্তব্য সঠিক হবে এবং আরও বৃদ্ধি ও ব্যাপকতা তৈরি হবে।

সাধারণত কম্পিউটার ও ফটোকপির দোকানে যেসকল  কাজ হয়ে থাকে, তা হলো-

  • বাংলা ও ইরেজি লেখা কম্পোজ করা।
  • ডকুমেন্ট তৈরি করা।
  • ফটোকপি করা
  • ই-মেইল পাঠানো ও গ্রহণ করা, তা প্রিন্ট করা।
  • প্রত্যয়ন পত্র কম্পোজ করা।
  • ছবি তোলা ও প্রিন্ট করে বের করা।
  • পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কম্পোজ করা।
  • অনলাইনে সরকারি ও বেসরকারি চাকুরীর আবেদন করার কাজ।
  • স্কুল-কলেজে অনলাইনে আবেদন।
  • বোর্ডের ডকুমেন্ট সংশোধনের কাজ।
  • ভোটার আইডি কার্ড বানাতে অনলাইনে আবেদনের কাজ।
  • নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করার কাজ।
  • চাকুরীর জন্য সিভি তৈরী।
  • দরকারি স্ট্যম্প কম্পোজ করার কাজ।
  • চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট তৈরি।
  • প্রত্যয়ন পত্র তৈরি।
  • চিঠি/ আবেদন লেখা।
  • ক্যাশ মেমো তৈরি।
  • অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করা ও যাচাই করা।
  • অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করা।
  • অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন ও চেক করার কাজ।
  • অনলাইনে ভিসা চেক করার কাজ।
  • অনলাইনে মেডিকেল রিপোর্ট চেক করারর কাজ।
  • অনলাইনে ট্রেন, বাস, লঞ্চ ও বিমানের টিকেট ক্রয় ও প্রয়োজনে তা প্রিন্ট করা।
  • অনলাইনে সকল পরীক্ষার রেজাল্ট দেখার কাজ। (বিভিন্ন চাকরি, ভর্তি, ভার্তি বাতিল সংক্রান্ত ও অন্যান্য কাজে)।
  • অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট তৈরি করার কাজ।
  • অনলাইনে জমির খতিয়ান ও নকশা বের করার কাজ।
  • অনলাইনে ম্যাপ তৈরির কাজ।
  • রঙ্গিন ও নাদা-কালো ছবি প্রিন্ট করার কাজ
  • ছবি থেকে ছবি বের করার কাজ।
  • ফাইল প্রিন্ট করার কাজ।
  • কালার প্রিন্ট ও কালার ফটোকপির কাজ।
  • অনলাইনে মুক্তিযোদ্ধার বিভিন্ন সনদ বের করার কাজ।
  • স্ক্যান করা, ই-মেইল করার কাজ।
  • অনলাইন থেকে বিভিন্ন সরকারি কাজের ফরম বের করার কাজ।
  • অনলাইনে ফি প্রদান করে বোর্ড চ্যালেঞ্জ করার কাজ।
  • অনলাইন মাধ্যমে বিভিন্ন বিল পরিশোধের কাজ।
  • বিভিন্ন ডকুমেন্ট ইডিটৈর কাজ।
  • ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার কাজ।
  • ফটোকপি করার কাজ।
  • লেমিনেটিং করার কাজ।
  • স্পাইরাল বাইন্ডিং করার কাজ।
  • দাওয়াত কার্ড তৈরি ও টাইপিং করার কাজ।
  • এছাড়াও সকল ডিজিটাল প্রিন্টের কাজ।

স্টেশনারি, অনলাইনে কম্পিউটার দ্বারা বিভিন্ন সেবা দান, স্টুডিও এবং ফটোকপি ব্যবসায় লাভবান হবেন যেভাবে

ব্যবসার শুরুতে লাভের আশা করলে সব হবে গুঁড়েবালি। তাই প্রথম লাভ নয় কাজের প্রতি সিরিয়াস ভাব প্রকাশ করার পেছনে সময় দিন। এতে করে আপনি আস্তে আস্তে ভালো সার্ভিস দিতে শুরু করলে পরবর্তীতে আর কাস্টোমার আসার অপেক্ষার প্রহর গুণতে হবে না। আপনা আপনি আপনার কাজের ভালো দিকগুলো লোকমুখে প্রচার হবে এবং আপনার ব্যবসার সুনাম বৃদ্ধি পাবে। এতে করে লাভে হিসাব বাড়তে থাকবে আস্তে আস্তে। তাই হুটহাট নয় কাজের সৌন্দর্যের প্রতি ফোকাস দিন। কাস্টোমারকে কাঙ্খিত সেবা দিন। আপনি এ থেকে পরবর্তীতে লাভের খাতা খুলতে পারেন সার্ভিসের মান দেখিয়ে। একটি কথা অবশ্যই মনে রাখবেন, ব্যবসায়ের শুরুতে আপনি যদি অসাধারণ স্কিল নিয়ে মাঠে নামেন তাহলে আপনাকে কম্পিটিশনে আবিষ্কার করা লাগবে না। অটো আপনার ব্যবসায়ের সুনাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে।

আপনার অনলাইন সেবা প্রদানকৃত ব্যবসায়িক কাজে যে কাজগুলো থেকে বিরত থাকবেন

ব্যবসায় ক্ষেত্রে আপনাকে হতে হবে সকলের প্রতি সৎ ও বিস্বস্থ। তাই দেশ, জাতি ও সমাজের কোনো অমঙ্গল কাজ আপনি আপনার ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে প্রশ্রয় দিবেন না। যেমন- বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কাগজপত্র অ-বৈ-ধভাবে তৈরি, জা-ল দলিল তৈরি, জা-ল সার্টিফিকেট তৈরি, ভু-য়া জন্ম নিবন্ধন তৈরি, ভু-য়া তথ্য দিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি এবং অ-বৈ-ধ পন্থায় সরকার কর্তৃক সত্যায়িত যে কোনো কাগজপত্র কম্পিউটার দ্বারা এডিট করে সংযোজন, প্রতিস্থাপন, বাতিল, মুছামুছি, নকল বা প্রতিরূপ ডকুমেন্ট অন্যের নাম তৈরি, জা-ল, জা-লিয়াতি, অ-বৈ-ধভাবে সেবা সংত্রান্ত তথ্যাদি বানানো, ভু-য়া বিভিন্ন কাগজপত্র বানানো ইত্যাদি কাজ কখনই করবেন না। এসব অ-নৈ-তিক ও গ-হির্ত কাজ থেকে বিরত থাকবেন। এসব কাজে কোনো মহত্ত্ব নেই। যারা এসব গ-হির্ত কাজ লোকচক্ষুর আড়ালে করে বেড়ায় তাদের আইনগত সমস্যায় পড়তে হয়। এছাড়াও স্কুল-কলেজে পরীক্ষা, বিভিন্ন পাবলিক ও বোর্ড পরীক্ষা চলাকালীন সময়কালে প্রশ্নপত্র, উত্তরপত্র প্রিন্ট, ন-কল ফটোকপি ইত্যাদি কাজ কখনই করবেন না।

শেষ কথা

সাধারণ এসকল বিজনেস প্রথমেই আপনাকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আপনার স্কিল ভালো করতে ব্যবসায়ে পা দেওয়ার আগেই সেই বিষয়টির প্রতি ধারণা নিন, কাজ না জানা থাকলে জেনে নিন প্রয়োজনে এসকল কাজ শেখার কোর্সে ভর্তি হতে পারেন ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে। এছাড়াও যিনি এ ব্যাপারে দক্ষ তার কাছ থেকে শিখে ফেলতে পারেন। তাছাড়া ব্যবসায়িক ধারণা পেতে পরিচিত বা যে কোনো দোকানে থেকে কাজ ও ব্যবসা সম্বন্ধে জানুন, শিখুন। এ থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা আপনার বেশ কাজে দেবে।

আর এভাবে আপনি একজন দক্ষা সেবাদাতা হয়ে উঠলে সাফল্য আপনার দ্বারে পৌঁছে যাবে। আর অনলাইন ভিত্তিক যে কোনো কাজ কম্পিউটার দ্বারা নিখুঁত করতে পারাটা একটা আর্ট। যার মাধ্যমে আপনার কাস্টমারদেরকে অবশ্যই অন্য দোকানে যাওয়া থেকে আপনার দোকানে আসতে বাধ্য করবে। আপনার কাজের প্রতি ডেডিকেটেড দেখে কাস্টমাররা দূর-দূরান্ত থেকে হলেও আপনার এখানে কাজ করাতে আসবে সে কথাটি প্রায় নিশ্চিত। তাই সর্বদা কাস্টমারদের সাথে হাসিখুশি আচরণ ও ভালো ব্যবহার করবেন। কখনোই আঘাত দিয়ে কথা বলবেন না। কোনো সেবা প্রদানে অনিচ্ছুক হলে বিনীতভাবে না বলবেন। তাদের কাজ যত্নের সাথে করে করে দিলে দ্রুতই আপনার ব্যবসার প্রসার ঘটবে।

Leave a Reply