ডেঙ্গু জ্বরে রক্তে প্লাটিলেট কমে গেলে করণীয় কী?

ডেঙ্গু জ্বরে রক্তে প্লাটিলেট কমে গেলে করণীয় কী?

Information

বর্তমানে বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। এ সময় ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে যে সমস্যা বেশি দেখা যায় তা হলো রক্তে প্লাটিলেট কমে যাওয়া। প্লাটিলেট হলো এক ধরনের রক্তকণিকা যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। যখন প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যায় তখন রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

রক্তে প্লাটিলেট কমতে শুরু করলে তাকে থ্রোম্বোসাইটোপেনিয়া বলা হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, দুটি কারণে রক্তে প্লাটিলেট কমতে শুরু করে। প্রথম কারণটি হলো রক্তে প্লাটিলেট দ্রুত ধ্বংস হয়ে যাওয়া। দ্বিতীয় কারণটি হলো রক্তে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্লাটিলেট তৈরি না হওয়া।

প্লাটিলেটের মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় সুস্থ মানুষের রক্তে দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ থাকে। যদি প্লাটিলেটের মাত্রা এই পরিমাণের কমে যায় তাহলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে শরীরে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো-

০১ঃ ত্বকে ছোট ছোট বেগুনি রঙের চিহ্ন দেখা দেওয়া।

০২ঃ কোথাও আঘাত পেলে সহজে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়া।

০৩ঃ দাঁতের মাড়ি বা নাক থেকে রক্তপাত হওয়া।

০৪ঃ প্রস্রাব বা মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া।

০৫ঃ ক্লান্তিবোধ হওয়া।

০৬ঃ শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেওয়া।

যদি উপরিউক্ত এই লক্ষণগুলোর মধ্যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিতে হবে। এক্ষেত্রে ডাক্তার রোগীর রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন এবং প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণ নির্ণয় করতে পারেন। প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণ নির্ণয় করার পরে ডাক্তার রোগীকে উপযুক্ত চিকিৎসা দেবেন।

প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যাওয়ার কিছু সাধারণ কারণ হলো-

০১ঃ তীব্র রক্তক্ষরণ।

০২ঃ কেমোথেরাপি।

০৩ঃ রেডিওথেরাপি।

০৪ঃ অটোইমিউন রোগ।

০৫ঃ সংক্রমণ।

০৬ঃ কিছু ওষুধ।

প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যাওয়ার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ বা চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন-

০১ঃ প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশন।

০২ঃ স্টেরয়েড।

০৩ঃ ইমিউনোসপ্রেসিভ ওষুধ।

০৪ঃ ভিটামিন।

০৫ঃ আয়রন।

রক্তে প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্যকারী খাবার-

সবুজ শাকসবজি: সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট এবং ভিটামিন কে থাকে যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। তাই প্লাটিলেট কমে গেলে সবুজ শাকসবজি খাওয়া উচিত।

ফল: ফলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা রক্তনালীগুলিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই প্লাটিলেট কমে গেলে ফল খাওয়া উচিত।

প্রোটিন: প্রোটিন রক্তের কোষগুলিকে তৈরি করতে সাহায্য করে। তাই প্লাটিলেট কমে গেলে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স: ভিটামিন বি কমপ্লেক্স রক্তের কোষগুলিকে তৈরি করতে এবং রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। তাই প্লাটিলেট কমে গেলে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।

ভিটামিন কে: ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। তাই প্লাটিলেট কমে গেলে ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।

আয়রন: আয়রন রক্তের লাল কোষগুলিকে তৈরি করতে সাহায্য করে। তাই প্লাটিলেট কমে গেলে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।

প্লাটিলেট কমে গেলে যা করবেন না-

০১ঃ মদ্যপান করবেন না।

০২ঃ ধূমপান করবেন না।

০৩ঃ অতিরিক্ত কফি পান করবেন না।

০৪ঃ অতিরিক্ত চা পান করবেন না।

০৫ঃ অতিরিক্ত লবণ খাবেন না।

০৬ঃ অতিরিক্ত চিনি খাবেন না।

০৭ঃ অতিরিক্ত ভাজা খাবার খাবেন না।

০৮ঃ অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খাবেন না।

০৯ঃ অতিরিক্ত আঁশযুক্ত খাবার খাবেন না।

Leave a Reply