অগ্নিনিরোধক টাকা বানানো কি সম্ভব?

অগ্নিনিরোধক নোট বানানো সুুবিধা ২০২৩

University Tips

বর্তমানে প্রায় সারা বিশ্বেই কাগজের তৈরি টাকার প্রচলন রয়েছে। এর পাশাপাশি কয়েন ব্যবস্থাও চালু রয়েছে। কাগজের তৈরি নোট গুলো সাধারণ বড় বড় অঙ্কের নোট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কাগজ এমন একটি পদার্থ যা কিনা পানিতে থাকলে ভিজে যায়, আগুনে দিলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়, কালি পড়লে দাগ পড়ে যায়, অসাবধানতাবশত ছিঁড়েও যায়, ময়লা পড়লে তা ফ্যাকাশে হয়ে পড়ে, টানাটানি আর হাতবদলে তা মুচড়িয়ে যেতে পারে, পোকা কেটে ফেলতে পারে। মোটকথা কাগজটি একসময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাহলে কাগজের এমন বৈশিষ্ট্য থাকার পরও তা দিয়ে কেনইবা মুদ্রা তৈরি করতে হবে!

আর কাগজের এমন বৈশিষ্ট্য থাকার পরও বড় বড় নোট নিয়ে বিপাকে আমাদের কম বেশি সকলেরই পড়তে হয়। এজন্য তেমনিই চিন্তার কারণ বহুগুণ বাড়ার সাথে সাথে বর্তমানে আলোচ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে আদৌ কি অগ্নিনিরোধক টাকা বানানো সম্ভব কি এমন প্রশ্নের মধ্য দিয়ে। আজ আমরা আলোচনা করবো অগ্নিনিরোধক টাকা বানানো সম্ভব কিনা যা আগুনে সহজে পুড়ে না সে বিষয়টি নিয়ে।

অগ্নিনিরোধক টাকা বানানো কি সম্ভব?

নিজ কষ্টার্জিত টাকা বা মুদ্রাকে সাধারণত সবাই সাবধানতার সাথেই ব্যবহার ও সংরক্ষণ করে রাখেন। আর তাই এর জন্য কাগজের নোটের অগ্নিনিরোধক ব্যবহার করাটা আসলেই নিষ্প্রয়োজন। কেউ কোনো কারণবশত বেখেয়াল হয়ে তা সংরক্ষণ ও এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব না করে আর এজন্য যদি দূর্ঘটনা ঘটে তাহলে সেটা একান্তই তার নিজের দায় বলে বিবেচ্য।

 

আচ্ছা এতো কিছুর পর ধরেই নিলাম অগ্নিনিরোধক টাকা বানানো সম্ভব। এখন এর জন্য একটি যদি ১ হাজার টাকার নোট বানাতে ৭ টাকা খরচ হয় আর তা কখনো আগুনে পুড়বে না এমন নিশ্চয়তা দিয়ে নোট বানাতে গেলে অবশ্যই খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে, তখন যেই টাকাটা বাড়তি খরচ হিসবে গণনা হবে। আর তা করতে তখন সরকার বা দেশের অতিরিক্ত খরচ বা ঘাটতি লাগবে। এর ফলে টাকার মানও পরিবর্তন হয়ে যাবে। তাই যদি অগ্নিনিরোধক নোট বানানো যায় কোনো দেশই সেটা করতে চাইবে না। এমন হলে তো আমাদের আগে উন্নত দেশগুলো এভাবেই চিন্তা করতো!

 

আবার অগ্নিনিরোধক টাকা পরিবর্তে যদি কয়েন তৈরি করা হয়, তাহলে এই কয়েনেরও কোনো ভরসা নেই। এই কয়েনের নোট প্রায় ১০ মিনিট উত্তপ্ত আগুনে রেখে দিলে দেখাযাবে যে এটা কয় টাকার কয়েন ছিলো তা চিনতে কষ্ট হচ্ছে।

অগ্নিনিরোধক নোট বানানো সুুবিধা

অগ্নিনিরোধক টাকা বানানোর ফলে ব্যবহার্য কাগজি নোট পুড়বে না বা তার ব্যবহার কতটা ফলপ্রসু হবে তা বিবেচ্য বিষয়। তবে এক্ষেত্রে নোটের ওজন বাড়ানো ছাড়া আর কি লাভ হবে, আবার এএর অন্তর্নিহিত মূল্য তো আর বাড়ছে না। আমজনতা যারা এই কাগজি নোট ব্যবহার করবে তারা আসলে কেনইবা চাইবে মুদ্রার উপর বা ভেতরে অগ্নিনিরোধক কিছু একটা ব্যবহার করতে কিংবা দেশের সরকার কেনো চাইবে মুদ্রার মধ্যে কোনো কিছুর প্রলেপন বা রাসায়নিক ব্যবহার করে প্রচলন করতে যখন জনসাধারণ নিজ স্বার্থেই তাদের নোট সংরক্ষণ করে রাখে। নোট বা মুদ্রা যেহেতু প্রয়োজনীয় বা মূল্যবান তাই দাহ্য বা পুড়ে এমন পদার্থ আগুন থেকে দূরে রাখাটা কর্তব্য। আর তা আগুনে পুড়ে গেলে সেটি নেহাত দুর্ভাগ্য ছাড়া কিছুই নয়।

 

তাছাড়া কাগজি নোট বাবা মুদ্রা ইটসেল্ফ ইজ এ স্ক্যাম! আর সমগ্র বিশ্ব তা জানে। এর মাধ্যমে ডমিনেট করে সমগ্র বিশ্বকে স্লেইভ বানিয়ে রাখছে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল। তাহলে এই স্ক্যামটা কিভাবে? ছোটবেলায় অনেকেই আমরা নিজেরা নোটের মতো সমান করে কাঁচি দিয়ে কাগজ কেটে তাতে মনমতো সংখ্যা বসিয়ে নকল টাকা বানিয়ে খেলেছি, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, বানানো সেই কাগজের নোটের ভ্যালু ঐ সংখ্যাটি! এক কাগজে ৫ টাকা লেখার মানে তা ৫ টাকা, এমন আরেকটি কাগে ১০০০ টাকা লেখা মানে তা ১০০০ টাকা! তবে সেটা কিসের বিচারে সেটা হচ্ছে? কেননা কাগজ তো একই  থাকছে, শুধু সংখ্যার পরিবর্তনে কেনো তাকে অতিরিক্ত ইকোনমিক ভ্যালু দিতে হবে?

 

ইলেকট্রনিক মানিতেও ঠিক একইভাবে এই নাম্বার দিয়ে গেম খেলা হবে সামনে। তবে আপাত দৃষ্টিতে সময়োপযোগী মনে হলেও যারা এই সিস্টেম ক্রিয়েট করবে তারা যে কখনো আপনার সাথে বিট্রে করবে না এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। যতো রকমের সিকিউরড সিস্টেমই মনে হোক না কেনো আপনি সেই অর্থ চোখে দেখা, সেন্ড-রিসিভ ছাড়া কিছু করতে পারবেন না। উপরন্তু আপনি ততোটুকুই এক্সেস করতে পারবেন, যতটুকু আপনাকে করতে দেওয়া হবে।  আর এভাবেই বিশ্বের সব সম্পদ আত্নসাৎ করা হচ্ছে আর আমরা কাগজের নোট বহনে সুবিধার বিপ্লবের বুলি আউড়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।

অগ্নিনিরোধক টাকা বানানো

প্রাচীনকালে বা ইসলামিক যুগে মুদ্রা ব্যবহারে সোনা, রুপা, তামার ব্যবহার এর গুরত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। এই পদার্থগুলোর অন্তর্নিহিত একটা ভ্যালু রয়েছে। বিনিময়ের জন্য এর উপরে যেই সংখ্যা বসিয়েই ব্যবহার করা হোক না কেনো, এর মূল্য কখনই কমবে না। দুর্ঘটনায় তা যদি পুড়ে গলে যায় তারপরও সেটি পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তোলা যাবে। আর এত মুদ্রাস্ফীতি হওয়ার সুযোগ কম। কেননা এই পদার্থগুলো প্রকৃতিতে লিমিটেড। অতএব যে শ্রমের বিনিময়ে সে অর্থ আপনি উপার্জন করতেন সেটি হারিয়ে যাবে না। আবার, কাগজি নোট যে শ্রমের বিনিময়ে অর্জন করবেন কোনো কারণে কাগজি নোট নষ্ট হয়ে পড়লে সেই শ্রমের কোনো মূল্যই থাকবে না। একইভাবে ইলেকট্রনিক মানির ক্ষেত্রেও। মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ কিংবা নগদ থেকে কোনোদিন ভুলে/স্ক্যাম এর শিকার হয়ে টাকা বের হয়ে গেলে সেটি ব্যাক পাওয়ার জটিলতা থেকেই এটি খুব সহজেই অনুমান করা যায়।

 

সবশেষে আলোচনায় প্রশ্ন থেকে যেতে পারে আর তা হলো চুরি, ডাকাতি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে কি এটি ব্যবহারে? কাগজি কিংবা ইলেকট্রনিক মানিতেও এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এজন্য দুষ্টকে দমন জরুরী, মুদ্রাকে পরিবর্ধন, গঠন দান কিংবা কোনোরূপ পরিবর্তন নয়।

Leave a Reply