মাধ্যমিক পৌরনীতি ও নাগরিকতা | অধ্যায়: ৫ (সংবিধান) সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক পৌরনীতি ও নাগরিকতা | অধ্যায়: ৫ (সংবিধান) সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

Education

মাধ্যমিক পৌরনীতি ও নাগরিকতা | অধ্যায়: ৫ (সংবিধান) সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১: ‘ক’ রাষ্ট্রের সংবিধানের ভাষা সহজ ও সরল। ফলে এটি সকলের নিকট সুস্পষ্ট ও বোধগম্য। এখানে মৌলিক অধিকারের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় এবং রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কিছু মূলনীতি রাখা হয়।

ক. সংবিধান কী?
খ. লিখিত সংবিধান বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত ‘ক’ রাষ্ট্রের সংবিধানের সাথে বাংলাদেশ সংবিধানের সাদৃশ্য আছে কী? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংবিধান একটি উত্তম সংবিধান- উক্তিটি বিশ্লেষণ করো। [ঢা.বো. ২০২২]

১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক) যেসব নিয়মের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হয় তাকে সংবিধান বলে।

খ) লেখার ভিত্তিতে সংবিধানের একটি ধরন হলো লিখিত সংবিধান। যে সংবিধানের অধিকাংশ বিষয় দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে তাকে লিখিত সংবিধান বলে। লিখিত সংবিধান সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট গণপরিষদ বা আইনসভা কর্তৃক প্রণীত হয়। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান লিখিত।

গ) উদ্দীপকে বর্ণিত ‘ক’ রাষ্ট্রের সংবিধানের সাথে বাংলাদেশ সংবিধানের সাদৃশ্য আছে।

বাংলাদেশের সংবিধান একটি লিখিত দলিল। এ সংবিধানের ভাষা সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল। এ কারণে বাংলাদেশের সংবিধান সকলের নিকট সুস্পষ্ট ও বোধগম্য হয়। বাংলাদেশের সংবিধানে নাগরিকের মৌলিক অধিকার যেমন— জীবনধারণের অধিকার। চলাফেরার অধিকার, বাক স্বাধীনতার অধিকার প্রভৃতিসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকারগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে এগুলোর গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নির্ধারণ করা হয়েছে।

উদ্দীপকে বর্ণিত ‘ক’ রাষ্ট্রের সংবিধানের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, এ সংবিধানের ভাষা সহজ-সরল হওয়ার কারণে এটি সকলের নিকট সুস্পষ্ট ও বোধগম্য। ‘ক’ রাষ্ট্রের সংবিধানে নাগরিকের মৌলিক অধিকারের উপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এছাড়া এ সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার কিছু মূলনীতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। ‘ক’ রাষ্ট্রের সংবিধানের এসব বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের অনুরূপ। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত ‘ক’ রাষ্ট্রের সংবিধানের সাথে বাংলাদেশ সংবিধানের সাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ) উদ্দীপকে বর্ণিত সংবিধান একটি উত্তম সংবিধান— উক্তিটি যথার্থ।

বিশ্বের সব রাষ্ট্রেই সংবিধান রয়েছে। যে রাষ্ট্রের সংবিধান যত উন্নত, সে রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা ততটা উত্তমভাবে পরিচালিত হয়। উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো- এতে রাষ্ট্রের প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো যেমন— মৌলিক অধিকার, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি প্রভৃতি সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় সুস্পষ্টভাবে লিখিত থাকে। উত্তম সংবিধান সংক্ষিপ্ত হয়। জনমতের ভিত্তিতে প্রণীত হয় বলে এতে জনগণের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে।

উত্তম সংবিধানের কোনো ধারার সংশোধন বা পরিবর্তন নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হয় । অর্থাৎ এ সংবিধানে সংশোধন পদ্ধতি উল্লেখ থাকে।

উদ্দীপকে দেখা যায়, ‘ক’ রাষ্ট্রের সংবিধানের ভাষা সহজ-সরল হওয়ার কারণে এটি সুস্পষ্ট ও সকলের বোধগম্য। এছাড়া এ সংবিধানে নাগরিকের মৌলিক অধিকার এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি উল্লেখ রয়েছে। ‘ক’ রাষ্ট্রের সংবিধানের এসব বৈশিষ্ট্য, উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

উপরের আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, উত্তম সংবিধানের অধিকাংশ বৈশিষ্ট্যের সাথে ‘ক’ রাষ্ট্রের সংবিধানের মিল রয়েছে। তাই উদ্দীপকে বর্ণিত ‘ক’ রাষ্ট্রের সংবিধানকে একটি উত্তম সংবিধান বলা যায়।

প্রশ্ন ২: ‘Z’ গ্রামের কিছু যুবক ‘সবুজ বাংলা’ নামে একটি সমিতি গঠনের উদ্যোগ নেয় এবং সেই সাথে সদস্যবৃন্দ সংগঠন পরিচালনার জন্য সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে লিখিত নিয়ম-কানুন প্রণয়নের চেষ্টা করছে। সংগঠনের সকলের ক্ষমতা ও কার্যাবলি লিখিত আকারে সংরক্ষিত। জনগণের কল্যাণের জন্য নিয়ম-কানুন পরিবর্তনযোগ্য। সমস্যা দেখা দিলে লিখিত আইনকানুন প্রাধান্য পাবে। সদস্যরা আশা করছে প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে সহজসরল ভাষায় রচিত হবে।

ক. সর্বজনীন ভোটাধিকার কী?
খ. “ব্রিটিশ সংবিধান তৈরি হয়নি, গড়ে উঠেছে”— ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানটি দেশ পরিচালনার জন্য কীভাবে তৈরি করা হয়েছে? পাঠ্যবইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘সবুজ বাংলা’ সমিতির মতো লিখিত নিয়ম-কানুনগুলো রাষ্ট্র পরিচালনায় জনকল্যাণকামী— বিশ্লেষণ করো। [ম. বো. ২০২২]

২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক) জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, পেশা ইত্যাদি নির্বিশেষে ১৮ বা তদুর্ধ্ব বছর বয়সের দেশের সকল নাগরিকের ভোটাধিকার প্রাপ্তি হলো সর্বজনীন ভোটাধিকার।

খ) ব্রিটিশ সংবিধান ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে।

সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতির মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি হলো ক্রমবিবর্তন পদ্ধতি। বিবর্তনের মাধ্যমে সংবিধান গড়ে উঠতে পারে। যেমন— ব্রিটেনের সংবিধান ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে লোকাচার ও প্রথার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে সংবিধান কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রণয়ন করা হয় না, ধীরে ধীরে গড়ে উঠে। তাই বলা হয়, ব্রিটিশ সংবিধান তৈরি হয়নি, গড়ে উঠেছে।

গ) উদ্দীপকে উল্লেখিত দেশ পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠানটি অর্থাৎ সংবিধান আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।

সংবিধান প্রণয়নের একটি উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি হলো আলাপ-আলোচনা সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত গণপরিষদের সদস্যদের আলাপআলোচনার মাধ্যমে সংবিধান রচিত হতে পারে। ভারত, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান এভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গণপরিষদ কর্তৃক ১৯৭২ সালে প্রণীত হয়।

উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, ‘Z’ গ্রামের কিছু যুবক ‘সবুজ বাংলা’ নামে একটি সমিতি গঠনের উদ্যোগ নেয়। এছাড়া সদস্যবৃন্দ সংগঠন পরিচালনার জন্য সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে লিখিত নিয়ম-কানুন প্রণয়নের চেষ্টা করছে। উদ্দীপকের এসব তথ্য আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান প্রণয়নের বিষয়ই নির্দেশ করে। কেননা কোনো কোনো দেশের সংবিধান আলাপ-আলোচনা বা মতামতের ভিত্তিতেই প্রণীত হয় ।

ঘ) ‘সবুজ বাংলা’ সমিতির মতো লিখিত নিয়ম-কানুনগুলো অর্থাৎ উঠা সংবিধান রাষ্ট্র পরিচালনায় জনকল্যাণকামী—উক্তিটি যথার্থ।

উত্তম সংবিধানের অধিকাংশ বিষয় লিখিত থাকে। এ সংবিধানের ভাষা সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল হয়। এ কারণে উত্তম সংবিধান সকলের নিকট সুস্পষ্ট ও বোধগম্য হয়। উদ্দীপকের সবুজ বাংলা সমিতির সকলের ক্ষমতা ও কার্যাবলিও লিখিত আকারে সংরক্ষিত হয়েছে। এছাড়া এ সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোও সহজ-সরল ভাষায় রচিত হবে, যা উত্তম সংবিধানের অনুরূপ।

উত্তম সংবিধান সুষম প্রকৃতির। এর অর্থ- উত্তম সংবিধান সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের মাঝামাঝি অবস্থান করে। অর্থাৎ এটি খুব সুপরিবর্তনীয় কিংবা খুব বেশি দুষ্পরিবর্তনীয় নয়। এর ফলে উত্তম সংবিধান সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম। সবুজ বাংলা সমিতির নিয়ম-কানুনগুলোও উত্তম সংবিধানের ন্যায় পরিবর্তনযোগ্য। এছাড়া উত্তম সংবিধান জনকল্যাণকামী হয়। দার্শনিক রুশো বলেছেন, যে আইনে মানুষের কল্যাণ নেই তা উত্তম সংবিধান হতে পারে না। সুতরাং উত্তম সংবিধান হবে জনকল্যাণকামী।

উপরের আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, উত্তম সংবিধানের সাথে সবুজ বাংলা সমিতির লিখিত নিয়ম-কানুনগুলোর সাদৃশ্য রয়েছে। আর উত্তম সংবিধান যেহেতু জনকল্যাণকামী, সেহেতু সবুজ অনুরূপ প্রশ্ন নম্বর: বাংলা সমিতির মতো লিখিত নিয়ম-কানুনগুলোও ১০, ১৫, ১৬, ২৩ রাষ্ট্র পরিচালনায় জনকল্যাণকামী।

SSC Civics Short Syllabus Suggestion 2023 & Questions

প্রশ্ন ৩: ৯ম শ্রেণিতে পাঠদানের জন্য শিক্ষক একটি বই নিয়ে এলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের বইটি দেখিয়ে বললেন যে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি পরিচালনার যাবতীয় বিষয় এই বইয়ে উল্লেখ আছে। তবে কোনো কোনো রাষ্ট্রে এটি অলিখিতও হয়ে থাকে।

ক. আইনসভা কী?
খ. এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র বলতে কী বোঝায়?
গ. শিক্ষকের প্রদর্শিত বইটি কী নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে শিক্ষকের শেষোক্ত মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক) রাষ্ট্রের শাসন কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সরকারের যে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করে এবং বিদ্যমান আইন সংশোধন ও পরিবর্তন। করে তাকে আইনসভা বলে।

খ) এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র বলতে এমন রাষ্ট্রকে বোঝায় যেখানে রাষ্ট্রের। সকল শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র পরিচালিত হয় কেন্দ্র থেকে। শাসনকার্যের সুবিধার জন্য দেশকে বিভিন্ন প্রদেশে বা অঞ্চলে ভাগ করে কিছু ক্ষমতা তাদের হাতে অর্পণ করা হয়। তবে প্রয়োজনবোধে কেন্দ্রীয় সরকার সে ক্ষমতা

ফিরিয়ে নিতে পারে। সাধারণত আঞ্চলিক সরকারগুলো কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে থেকে কেন্দ্রের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য প্রভৃতি দেশ এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রের উদাহরণ।

গ) শিক্ষকের প্রদর্শিত বইটি বাংলাদেশের সংবিধানকে নির্দেশ করে।

রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। এসব নিয়মাবলির সমষ্টিকে সংবিধান বলে। সংবিধান হলো রাষ্ট্র পরিচালনার দলিল। রাষ্ট্র পরিচালিত হয় সংবিধানের মাধ্যমে। সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার যাবতীয় বিষয় লিপিবদ্ধ থাকে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যও একটি সংবিধান রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান একটি লিখিত সংবিধান। এতে বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালনার যাবতীয় বিষয় যেমন— রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য, শাসকের ক্ষমতা এবং নাগরিক ও শাসকের সম্পর্কে কীরূপ হবে তা সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ আছে।

উদ্দীপকে বলা হয়েছে, শিক্ষক নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একটি বই দেখিয়ে বলেন যে, এতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি পরিচালনার যাবতীয় বিষয় উল্লেখ আছে। আর রাষ্ট্র পরিচালনার যাবতীয় বিষয় যে বইয়ে লিপিবদ্ধ থাকে তাই হলো সংবিধান। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের শিক্ষক প্রদর্শিত বইটি বাংলাদেশের সংবিধানকে নির্দেশ করে।

ঘ) উদ্দীপকে শিক্ষকের শেষোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

উদ্দীপকের শিক্ষক বাংলাদেশের লিখিত সংবিধান সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, কোনো কোনো রাষ্ট্রে সংবিধান অলিখিতও হয়ে থাকে।

লেখার ভিত্তিতে সংবিধান দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা- লিখিত সংবিধান ও অলিখিত সংবিধান। লিখিত সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার অধিকাংশ নিয়ম-কানুন দলিলে সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ থাকে। এতে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, শাসকের ক্ষমতা, জনগণের অধিকার প্রভৃতি বিষয় লিখিত আকারে উল্লেখ থাকে। যেমন— বাংলাদেশ, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান লিখিত সংবিধান। অপরদিকে অলিখিত সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার অধিকাংশ বিষয় দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে না। এ ধরনের সংবিধান প্রথা ও রীতিনীতিভিত্তিক। চিরাচরিত নিয়ম ও আচার অনুষ্ঠানের ভিত্তিতে এ ধরনের সংবিধান গড়ে উঠে। যেমন— ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত সংবিধান।

পরিশেষে বলা যায়, লিপিবদ্ধকরণ বা লেখার ভিত্তিতে সংবিধান লিখিত ও অলিখিত দুই ধরনের হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ভারতে সংবিধান লিখিত হলেও ব্রিটিনের সংবিধান অলিখিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের শিক্ষকের শেষোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

প্রশ্ন ৪: ‘X’ রাষ্ট্র স্বাধীন হওয়ার পর সংবিধান রচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি অনেক পরিশ্রম করে একটি খসড়া সংবিধান প্রণয়ন করে। পরে গণপরিষদে সদস্যদের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত প্রদানের পর তা গৃহীত ও কার্যকর হয়।

ক. কোন সংবিধান সুষম প্রকৃতির?
খ. মৌলিক অধিকার বলতে কী বোঝায়?
গ. কোন পদ্ধতির মাধ্যমে ‘X’ দেশের সংবিধান প্রণীত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সংবিধান প্রণয়নে উক্ত পদ্ধতি ছাড়া আরও অনেক পদ্ধতি রয়েছে— কথাটি বিশ্লেষণ করো। [দি. বো. ২০২২]

৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক) উত্তম সংবিধান সুষম প্রকৃতির।

খ) মৌলিক অধিকার হলো সেসব অধিকার যা একটি দেশের সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও বলবৎ হয়।

মৌলিক অধিকার সংবিধানে উল্লেখ থাকে। এ অধিকার আইনের মতোই অলঙ্ঘনীয়। মানুষের মৌলিক অধিকারে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এ অধিকার মানুষের মৌলিক চাহিদা ও প্রয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত। মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সর্বোচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়ে ন্যায়বিচার লাভ করতে পারে।

গ) আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ‘X’ দেশের সংবিধান প্রণীত হয়েছে।

সংবিধান প্রণয়নের কতগুলো পদ্ধতি রয়েছে। পদ্ধতিগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান প্রণয়ন অন্যতম। এ পদ্ধতিতে সংবিধান রচনার জন্য গণপরিষদ গঠন করা হয়। গণপরিষদের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সংবিধান প্রণয়ন করে থাকে। বাংলাদেশ, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান আলাপ আলোচনার মাধ্যমে প্রণীত হয়েছে।

উদ্দীপকে ‘X’ রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়নের পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি খসড়া সংবিধান প্রণয়ন করলে গণপরিষদের সদস্যদের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত প্রদানের পর তা গৃহীত ও কার্যকর হয়। ‘X’ রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান রচনার পদ্ধতির সাথেই সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই বলা যায়, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ‘X’ রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণীত হয়েছে।

ঘ) “সংবিধান প্রণয়নে উক্ত পদ্ধতি তথা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান প্রণয়নের পদ্ধতি ছাড়াও আরও অনেক পদ্ধতি রয়েছে”উক্তিটি যথার্থ।

সংবিধান প্রণয়নের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। পদ্ধতিগুলোর মধ্যে আলাপআলোচনার মাধ্যমে সংবিধান প্রণয়ন অন্যতম। কিন্তু এ পদ্ধতি ছাড়াও সংবিধান প্রণয়নের আরো তিনটি পদ্ধতি রয়েছে। এগুলো হলোঅনুমোদন, বিপ্লব ও ক্রমবির্তনের মাধ্যমে।

দীর্ঘদিন যাবৎ স্বেচ্ছাচারী শাসকের অধীনে জনগণ রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। এতে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয়। জনগণকে শান্ত করার জন্য এবং তাদের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য এক পর্যায়ে সংবিধান প্রণয়ন করে। এ ধরনের পদ্ধতি হলো অনুমোদনের মাধ্যমে সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতি। আবার জনস্বার্থের পরিপন্থী স্বৈরশাসককে বিপ্লবের মাধ্যমে হটিয়ে নতুন শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং নতুন সংবিধান রচনা করে। রাশিয়া, কিউবা ও চীনে এভাবে বিপ্লবের মাধ্যমে সংবিধান প্রণীত হয়েছে। এছাড়া ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমেও সংবিধান গড়ে উঠতে পারে। যেমন- ব্রিটেনের সংবিধান ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে লোকাচার ও প্রথার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।

উপরের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, উদ্দীপকে বর্ণিত আলাপআলোচনার মাধ্যমে সংবিধান প্রণয়নের পদ্ধতি ছাড়াও উপরে বর্ণিত পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমেও সংবিধান রচিত হয়। তাই বলা যায়, প্রশ্নোত্ত কথাটি যথার্থ।

প্রশ্ন ৫: বাংলাদেশের সংবিধান সম্পর্কিত তথ্য:

বৈশিষ্ট্য:
১. খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তার অধিকার সংবিধানে তুলে ধরা হয়েছে।
২. সংবিধান পরিবর্তন করতে তিনভাগের দুইভাগ সদস্যের অনুমতি প্রয়োজন হয়।
সংশোধনী:
১. ১৯৭৫ সালে একটি সংশোধনী হয়।
২. ২০১১ সালে আর একটি সংশোধনী।

ক. ব্রিটিশ সংবিধানের ক্রমবিবর্তন সম্পর্কে প্রচলিত উক্তিটি কী?
খ. সংবিধানকে রাষ্ট্রের দর্পণ বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের সংবিধানের কোন বৈশিষ্ট্য দুটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত সংশোধনী দুটি বিশ্লেষণ করো। [কু. বো. ২০২২]

৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক) ব্রিটিশ সংবিধানের ক্রমবিবর্তন সম্পর্কে প্রচলিত উক্তিটি হলো“ব্রিটিশ সংবিধান তৈরি হয়নি, গড়ে উঠেছে।”

খ) রাষ্ট্র পরিচালনার যাবতীয় নিয়মকানুন সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে বলে একে ‘রাষ্ট্রের দর্পণ’ বলা হয়।

সংবিধান হলো রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক দলিল। সংবিধানে নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য, শাসকের ক্ষমতা এবং নাগরিক ও শাসকের সম্পর্ক কীরূপ হবে তা সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ থাকে। জনগণের মৌলিক অধিকার কী কী এবং কীভাবে সেগুলো সংরক্ষিত হবে তাও সংবিধান কর্তৃক সুনির্দিষ্ট হয়। এসব বিষয়ে সংবিধানের পরিপন্থি কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না। অর্থাৎ একটি আদর্শ রাষ্ট্রের মূল প্রতিচ্ছবি সংবিধানে প্রতিফলিত হয়। তাই সংবিধানকে ‘রাষ্ট্রের দর্পণ’ বলা হয়।

গ) উদ্দীপকে বাংলাদেশের সংবিধানের ‘মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি’ এবং ‘দুষ্পরিবর্তনীয়’ এই দুটি বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।

বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি এবং দুষ্পরিবর্তনীয়তা। একজন বাংলাদেশি নাগরিক কী কী মৌলিক অধিকার ভোগ করবে তা সংবিধানে উল্লেখ থাকায় এগুলোর গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী একজন বাংলাদেশি নাগরিক খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার পাশাপাশি জীবনধারণের অধিকার, চলাফেরার অধিকার, বাক স্বাধীনতার অধিকার, সম্পত্তির অধিকার প্রভৃতি অধিকার লাভ করবে। আবার বাংলাদেশের সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয়। এর কোনো নিয়ম পরিবর্তন বা সংশোধন করতে জাতীয় সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যদের সম্মতির প্রয়োজন হয়।

উদ্দীপকে বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনায় বলা হয়েছে, এতে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে, যা মৌলিক অধিকার অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া সংবিধান পরিবর্তন করতে তিনভাগের দুইভাগ সদস্যের অনুমতির প্রয়োজনের বিষয়টি বাংলাদেশ সংবিধানের দুষ্পরিবর্তনীয়তা বিষয়টিকে ফুটিয়ে তুলে।

ঘ) উদ্দীপকে উল্লিখিত সংশোধনীদ্বয় যথাক্রমে চতুর্থ সংশোধনী ও পঞ্চদশ সংশোধনী নামে পরিচিত। উক্ত সংশোধনীদ্বয় যথাক্রমে জানুয়ারী, ১৯৭৫ ও জুলাই, ২০১১ তে করা হয়েছে।

চতুর্থ সংশোধনীতে সংসদীয় সরকারব্যবস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। উপরাষ্ট্রপতির পদ সৃষ্টি এবং সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে একটিমাত্র জাতীয় দল সৃষ্টি করা হয়। রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে সংসদীয় ঐতিহ্যের অভাব, তৎকালীন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা ও রাজনীতিতে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ দমনের উদ্দেশ্যে চতুর্থ সংশোধনী আনা হয়।

আবার, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়। ১৯৭২ সালে সংবিধানের রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি যথা: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করা হয়। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখার পাশাপাশি সকল ধর্মচর্চার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়। জাতীয় সংসদে মহিলাদের জন্য ৫০টি আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বিপথগামী কতিপয় সেনাসদস্য কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ক্ষমতাসীন

সামরিক সরকার সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি পরিবর্তনসহ অনেক আপত্তিজনক পরিবর্তন আনে। ২০১১ সালের জুলাইয়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর মূল উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নির্ধারণে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যাওয়া।

প্রশ্ন ৬: দৃশ্যকল্প-১: রাংটিয়া গ্রামের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য গ্রামবাসী ‘গোলাপ’ নামের একটি সমবায় সমিতি গঠন করে। ঐ সমিতির নিয়ম-কানুন সহজেই সদস্যদের নিকট বোধগম্য। পরিচালনার দায়িত্বে নিযুক্ত ব্যক্তিরা ইচ্ছা করলেই নিয়ম পরিবর্তন করতে পারে না।

দৃশ্যকল্প-২: ভারুয়া গ্রামের মানুষেরা ‘জাগরণ’ নামে একটি সমিতি গঠন করে। ঐ সমিতির নিয়মগুলো সহজেই পরিবর্তন করা যায়। তাই সমিতির সদস্যদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়। ফলে বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম।

ক. দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান কাকে বলে?
খ. সংবিধান প্রণয়ন প্রয়োজন হয় কেন?
গ. দৃশ্যকল্প-১ কোন সংবিধানকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ ও ২ এর মধ্যে কোনটি উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। [চ. বো. ২০২২]

৬ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক) যে সংবিধানের কোনো ধারা সহজে পরিবর্তন বা সংশোধন করা যায় না, তাকে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান বলে।

খ) একটি রাষ্ট্রকে সঠিক ও যথার্থভাবে পরিচালনা ও রাষ্ট্রীয় জীবনের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সুষ্ঠু সংবিধান প্রণয়ন অপরিহার্য।

সংবিধান হলো রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক দলিল। সংবিধানে নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য, শাসকের ক্ষমতা এবং নাগরিক ও শাসকের সম্পর্ক কীরূপ হবে তা সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ থাকে। জনগণের মৌলিক অধিকার কী কী এবং কীভাবে সংরক্ষিত হবে তাও সংবিধান নির্দিষ্ট করে। সংবিধান ছাড়া একটি সভ্য রাষ্ট্র পরিচালনার কথা কল্পনা করা যায় না। তাই বলা যায়, রাষ্ট্র ও জনগণের সার্বিক দিক পরিচালনা ও উন্নয়নের জন্য সংবিধান প্রণয়ন প্রয়োজন ।

গ) দৃশ্যকল্প-১ লিখিত সংবিধানকে নির্দেশ করে।

যে সংবিধানের অধিকাংশ বিষয় দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে তাকে লিখিত সংবিধান বলে। লিখিত সংবিধানের বেশকিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন- এ সংবিধানের অধিকাংশ ধারা লিখিত থাকে বলে এটি জনগণের কাছে সুস্পষ্ট ও বোধগম্য হয়। শাসক তার ইচ্ছামতো এটি পরিবর্তন বা সংশোধন করতে পারে না। তাই লিখিত সংবিধান যেকোনো পরিস্থিতিতে স্থিতিশীল থাকতে পারে। এই সংবিধানের সব ধারা জনগণ ও শাসক মেনে চলতে বাধ্য হয়। আবার লিখিত সংবিধান যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থার জন্য উপযোগী। এ সংবিধানের মাধ্যমে প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করে দেওয়া হয়। যেমন- ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে লিখিত সংবিধানের মাধ্যমেই ক্ষমতা বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। লিখিত সংবিধানে শাসকের ক্ষমতা কী হবে, জনগণ কী কী অধিকার ভোগ করবে তা-ও উল্লেখ করা হয়। এর ফলে শাসক ও জনগণ নিজেদের ক্ষমতা ও অধিকার সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারে।

দৃশ্যকল্প-১ এ দেখা যায়, রাংটিয়া গ্রামের ‘গোলাপ’ নামের সমবায় সমিতির নিয়ম-কানুন সহজেই সদস্যদের নিকট বোধগম্য। এছাড়া পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা ইচ্ছা করলেই সমিতির নিয়ম কানুন পরিবর্তন করতে পারে না। ‘গোলাপ’ সমবায় সমিতির এসব বৈশিষ্ট্য লিখিত সংবিধানকেই নির্দেশ করে।

ঘ) দৃশ্যকল্প-১ ও ২ এর মধ্যে দৃশ্যকল্প-১ উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের কোনো না কোনো সংবিধান রয়েছে। যে রাষ্ট্রের সংবিধান যত উন্নত, সে রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা ততটা উত্তমভাবে পরিচালিত হয়। উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে দেখা যায়, এ সংবিধানের অধিকাংশ বিষয় লিখিত থাকে। এর ভাষা সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল হয়। এ কারণে উত্তম সংবিধান সকলের নিকট সুস্পষ্ট ও বোধগম্য হয়।

উত্তম সংবিধানের উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যের সাথে দৃশ্যকল্প-১ এর মিল পাওয়া যায়। কেননা দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত সমবায় সমিতির নিয়ম-কানুন সহজেই সদস্যদের নিকট বোধগম্য। অন্যদিকে, দৃশ্যকল্প-২ এর ‘জাগরণ’ সমিতির নিয়মগুলো সহজেই পরিবর্তন করা যায় বলে এতে সমিতির সদস্যদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়। এর ফলে বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম থাকে। দৃশ্যকল্প-২ এর ‘জাগরণ’ সমিতির এসব বৈশিষ্টোর সাথে উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের কোনো সাদৃশ্য নেই। উপরের আলোচনার ভিত্তিতে তাই বলা যায়, দৃশ্যকল্প-১ ও ২ এর মধ্যে দৃশ্যকল্প-১ এর সাথে উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে।

প্রশ্ন ৭: ‘স্বপ্ন’ নামক সামাজিক সংগঠনটি কতগুলো সামাজিক রীতিনীতির মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে। সংগঠনের মধ্যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তারা প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে। অন্যদিকে সুস্পষ্টভাবে লিখিত কিছু নিয়ম-কানুন মেনে ‘বন্ধন’ নামক সংগঠনটি পরিচালিত হয়। সংকটকালীন অবস্থার সৃষ্টি হলে লিখিত নিয়মকানুন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তবে মাঝে মাঝে লিখিত নিয়ম-কানুনের ব্যাখ্যা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়।

ক. এরিস্টটল প্রদত্ত সংবিধানের সংজ্ঞা কী?
খ. সংবিধানকে কেন রাষ্ট্র পরিচালনার মূল দলিল বলা হয়?
গ. ‘স্বপ্ন’ নামক সামাজিক সংগঠনটির পরিচালনার নিয়মাবলির সাথে কোন ধরনের সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘বন্ধন’ সংগঠনটি পরিচালনার নিয়মাবলির মধ্যে তুমি কি উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি আছে বলে মনে কর? তোমার মতামতের সপক্ষে যুক্তি দাও। [সি. বো. ২০২২]

এসএসসি পৌরনীতি ও নাগরিকতা সুপার সাজেশন্স ২০২৩

৭ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক) গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটলের মতে, “সংবিধান হলো এমন এক জীবন পদ্ধতি, যা রাষ্ট্র স্বয়ং বেছে নিয়েছে।”

খ) সংবিধান হলো রাষ্ট্র পরিচালনার মূল বা মৌলিক দলিল।

সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়। আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ কীভাবে গঠিত হবে, এদের গঠন ও ক্ষমতা কী হবে, জনগণ রাষ্ট্রপ্রদত্ত কী কী অধিকার ভোগ করবে এবং জনগণ ও সরকারের সম্পর্ক কেমন হবে এসব বিষয় সংবিধানে উল্লেখ থাকে। এসব বিষয়ে সংবিধানের পরিপন্থি কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না। তাই সংবিধানকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল দলিল বলা হয়।

গ) ‘স্বপ্ন’ নামক সামাজিক সংগঠনটি পরিচালনার নিয়মাবলির সাথে অলিখিত সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে।

অলিখিত সংবিধানের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো- এটি ঐতিহাসিকভাবে উদ্ভূত সাধারণ প্রচলিত প্রথা, রীতি-নীতি, অভ্যাস-আচরণের ওপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয়। কোনো পরিষদ, সম্মেলন বা বিশেষভাবে গঠিত আইন, পরিষদ কর্তৃক অলিখিত সংবিধান সৃষ্টি করা হয় না। লিখিত সংবিধান যেমন দলিল আকারে পাওয়া যায়, অলিখিত সংবিধান সেরূপ পাওয়া যায় না। অলিখিত সংবিধানের পরিবর্তন প্রক্রিয়াও সহজ। অলিখিত সংবিধান ব্যবস্থায় সাধারণ আইন-কানুন ও শাসনতান্ত্রিক আইনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।

উদ্দীপকের ‘স্বপ্ন’ নামক সামাজিক সংগঠনটি কতগুলো সামাজিক রীতিনীতির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হয়। যা মূলত উপরে বর্ণিত অলিখিত সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন। অতএব উদ্দীপকের ‘স্বপ্ন’ সংগঠনটি অলিখিত সংবিধানের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

ঘ) হ্যাঁ, ‘বন্ধন’ সংগঠনটি পরিচালনার নিয়মাবলির মধ্যে উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি আছে বলে আমি মনে করি।

উত্তম সংবিধান হলো রাষ্ট্র পরিচালনার এমন দলিল যেটি লিখিত, সুস্পষ্ট, সংক্ষিপ্ত এবং সুষম প্রকৃতির। এ সংবিধানের ভাষা সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল হওয়ায় তা সকলের নিকট বোধগম্য হয়। জনমতের ভিত্তিতে প্রণীত হয় বলে এতে জনগণের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে। যেকোনো সংকটকালীন সময়ে এ সংবিধানের কোনো ধারার সংশোধন বা পরিবর্তন নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হয়। অর্থাৎ কোন অংশ কীভাবে সংশোধন করতে হবে তা উত্তম সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকে। উদ্দীপকের ‘বন্ধন’ সংগঠনটি পরিচালনার নিয়মাবলিতে এসব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।

উদ্দীপকের দ্বিতীয় অংশে দেখা যায়, ‘বন্ধন’ নামক সংগঠনটি কিছু লিখিত নিয়ম-কানুন মেনে পরিচালিত হয়। কোনো কারণে সংকটকালীন অবস্থার সৃষ্টি হলে লিখিত নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। উক্ত সংগঠনের এসব বৈশিষ্ট্য উপরে বর্ণিত উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এ সংবিধান লিখিত থাকে বলে শাসক তার ইচ্ছা মতো এটি পরিবর্তন বা সংশোধন করতে পারে না। তবে লিখিত নিয়মকানুনের ব্যাখ্যা নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তা সংশোধন করা সম্ভব।

উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ‘বন্ধন’ সংগঠনটি উত্তম সংবিধানের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। কেননা এতে উত্তম সংবিধানের কতিপয় বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।

প্রশ্ন ৮: দৃশ্য-১: ‘পল্লী বোন’ সমিতির সদস্য সংখ্যা একশত জন। সমিতিটি পরিচালনার জন্য সকল সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। নীতিমালা অনুযায়ী সমিতিটি পরিচালিত হয়।

দৃশ্য-২: ‘পল্লী মঙ্গল’ সমিতি পরিচালনার জন্য নিয়ম-কানুনগুলো লিপিবদ্ধ করা হয় এবং ইচ্ছা করলেই এগুলো পরিবর্তন করা যায় না। প্রত্যেক সদস্য কী ধরনের সুবিধা ভোগ করবে তা উল্লেখ আছে। নীতি বহির্ভূত কাজ করলে শাস্তিরও বিধান আছে।

ক. লিখিত সংবিধান কাকে বলে?
খ. লিখিত সংবিধান সহজে পরিবর্তন করা যায় না কেন? গ. দৃশ্য-১-এ ‘পল্লী বোন’ সমিতির তৈরীকৃত নীতিমালাগুলো সংবিধান প্রণয়নের যে পদ্ধতির সাথে মিল রয়েছে তা ব্যাখ্যাকরো।
ঘ. দৃশ্য-২-এ ‘পল্লী মঙ্গল’ সমিতির প্রণীত নীতিমালাগুলো বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের সাথে সংগতিপূর্ণ— তোমার মতামত দাও।

৮ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক) যে সংবিধানের অধিকাংশ বিষয় দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে তাকে লিখিত সংবিধান বলে।

খ) লিখিত সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে এতে লিপিবদ্ধ নিয়ম-কানুন অনুসরণ করতে হয় বলে এটি সহজে পরিবর্তন বা সংশোধন করা যায় না। লিখিত সংবিধান স্থিতিশীল বিধায় শাসক তার ইচ্ছামত এটি পরিবর্তন করতে পারে না। সংশোধনের ক্ষেত্রে জটিল পদ্ধতির আশ্রয় নিতে হয় বলে। একে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান বলে। কেবল বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা, সম্মেলন ও ভোটাভুটির মাধ্যমে এটি পরিবর্তন বা সংশোধন করা যায়।

গ) দৃশ্য-১ এ ‘পল্লী বোন’ সমিতির তৈরীকৃত নীতিমালাগুলোর আলাপআলোচনার মাধ্যমে সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতির সাথে মিল রয়েছে।

সংবিধান হলো রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক দলিল। যে সব নিয়মের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হয় তাকে সংবিধান বলে। সরকার কীভাবে নির্বাচিত হবে, আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ গঠনের পদ্ধতি ও ক্ষমতা কী হবে, জনগণ ও সরকারের সম্পর্ক কেমন হবে- এগুলোসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংবিধানে উল্লেখ থাকে। সংবিধান প্রণয়নের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে আলাপআলোচনা একটি। সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত গণপরিষদের সদস্যদের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান রচিত হতে পারে। ভারত, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সংবিধান এভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে বাংলাদেশের সংবিধানও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গণপরিষদ কর্তৃক ১৯৭২ সালে প্রণীত হয়।

উদ্দীপকের দৃশ্য-১ এ লক্ষণীয়, ‘পন্নী বোন’ সমিতিটি পরিচালনার জন্য এর সকল সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে কিছু নীতিমালা প্রখয়ন করা হয়। এটি উপরে বর্ণিত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতিরই অনুরূপ। অতএব বলা যায়, ‘‘পল্লী বোন’ সমিতির নীতিমালা প্রণয়নের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান প্রণয়নের মিল রয়েছে।

ঘ) দৃশ্য- ২ এ ‘পল্লী মঙ্গল’ সমিতির প্রণীত নীতিমালাগুলো বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের সাথে সংগতিপূর্ণ।

বাংলাদেশের সংবিধান হলো লিখিত এবং দুষ্পরিবর্তনীয়। যে সংবিধানের অধিকাংশ বিষয় লিপিবদ্ধ থাকে তাকে লিখিত সংবিধান বলে। এ সংবিধানের আইনগুলো জনমতের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। তাই এ সংবিধান জনগণের কাছে সুস্পষ্ট ও বোধগম্য থাকে। জনগণ এর সব নিয়মকানুন মেনে চলতে বাধ্য হয়। লিখিত সংবিধান যেকোনো পরিস্থিতিতে স্থিতিশীল থাকে এবং তার ভিত্তিতে সমস্যা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। এ সংবিধানে জনগণের মৌলিক অধিকার সুনির্দিষ্টভাবে নিপিবদ্য থাকে। তাই শাসক বা সবকার ইচ্ছা করলেই জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করতে পারে না।

উদ্দীপকের দৃশ্য-২-এর ‘পল্লী মঙ্গল সমিতি পরিচালনার নিয়ম-কানুনগুলো লিপিবদ্ধ এবং ইচ্ছা করলেই পরিবর্তন করা যায় না। অর্থাৎ এটি লিখিত এবং দুষ্পরিবর্তনীয়। আবার প্রত্যেক সদস্য কী ধরনের সুবিধা ভোগ করবে এবং নীতি বহির্ভূত কাজ করলে কী শাস্তি হবে তাও লিপিবদ্ধ আছে। এসব বৈশিষ্ট্য উপরে বর্ণিত বাংলাদেশের সংবিধানের কতিপয় বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

পরিশেষে বলা যায়, ‘পল্লী মঙ্গল সমিতি বাংলাদেশের পরিচালনার নীতিমালার সাথে সংবিধানের গঠন ও প্রকৃতিগত সংগতি বিদ্যমান।

প্রশ্ন ৯: ‘ক’ দেশে ১৯৭২ সালে ৩৪ জন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি সংবিধান রচনার দায়িত্ব নেয়। এ কমিটি এপ্রিল মাসে খসড়া সংবিধান ঘণপরিষদে উত্থাপন করে। ১৯শে অক্টোবর থেকে ৪ঠা নভেম্বর পর্যন্ত এ সংবিধান গণপরিষদে পাঠ করে তার পক্ষে-বিপক্ষে মত গ্রহণ করা হয় এবং তা পরিমার্জন করা হয়।

ক. লিখিত সংবিধান কাকে বলে?
খ. উত্তম সংবিধান সুষম প্রকৃতির ব্যাখ্যা করো।
গ. ‘ক’ দেশের সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতিটি কোন ধরনের? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহ পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

৯ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক) যে সংবিধানের অধিকাংশ বিষয় দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে তাকে লিখিত সংবিধান বলে।

খ) উত্তম সংবিধানের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি সুষম প্রকৃতির সুষম প্রকৃতির অর্থ হলো উত্তম সংবিধান সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের মাঝামাঝি অবস্থান করে। অর্থাৎ এটি খুব সুপরিবর্তনীয় কিংবা খুব বেশি দুষ্পরিবর্তনীয় নয়। এর ফলে উত্তম সংবিধান সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে।

গ) উদ্দীপকের ‘ক’ অর্থাৎ বাংলাদেশের সংবিধান আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রণয়ন করা হয়েছে।

উদ্দীপকে বলা হয়েছে, ‘ক’ দেশে ১৯৭২ সালে ৩৪ জন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি সংবিধান রচনার দায়িত্ব নেয়। এ কমিটি এপ্রিল মাসে খসড়া সংবিধান গণপরিষদে উত্থাপন করে। ১৯শে অক্টোবর থেকে ৪ঠা নভেম্বর পর্যন্ত এ সংবিধান গণপরিষদে পাঠ করে তার পক্ষে-বিপক্ষে মত গ্রহণ এবং তা পরিমার্জন করা হয়। এখানে বাংলাদেশের সংবিধানের প্রতি ইঙ্গিত’ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রণয়ন করা হয়েছে।

সংবিধান প্রণয়নের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি পদ্ধতি হলো। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে প্রণয়ন। সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত গণপরিষদের সদস্যদের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান রচিত হয়ে পারে। পাকিস্তান, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান এভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে সংবিধানের খসড়া প্রণয়নের জন্য ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। খসড়া সংবিধান দীর্ঘ আলোচনার পর ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর গৃহীত এবং ১৬ই ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। –

ঘ) উক্ত সংবিধান অর্থাৎ বাংলাদেশের সংবিধানের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। স্বাধীনতা লাভের পর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মল দলিল হিসেবে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। এই সংবিধান প্রণয়নের জন্য ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়েছিল। কমিটির অক্লান্ত পরিশ্রমে বাংলাদেশের সংবিধানের খসড়া তৈরি করে এবং ১৯৭২ সালের ১৯শে অক্টোবর গণপরিষদে উত্থাপিত হয়। এরপর সংবিধানের বিভিন্ন দিক নিয়ে গণপরিষদে আলোচনার পর ৪ঠা নভেম্বর সংবিধান গৃহীত এবং ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর সংবিধান কার্যকর করা হয়। বাংলাদেশের সংবিধান লিখিত এবং সংক্ষিপ্ত। বাংলাদেশের সংবিধানে একটি প্রস্তাবনা, ১৫৩টি অনুচ্ছেদ, ১১টি ভাগ ও ৭টি তফসিল রয়েছে। এতে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার কাঠামো, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি ইত্যাদি সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এ সংবিধানের কোনো ধারা বা অংশরিশেষ পরিবর্তন করতে হলে জাতীয় সংসদের মোট সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশের ভোট প্রয়োজন হয়।

বাংলাদেশের সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। কারণ সংবিধানের ধারার সাথে দেশের প্রচলিত কোনো আইনের সংঘাত সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে সংবিধান প্রাধান্য পায়। সংবিধানের ৭ নম্বর অনুচ্ছেদের ২-এ বলা হয়েছে, এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোনো আইন যদি সংবিধানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তবে ঐ আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ হবে ততখানি বাতিল বলে গণ্য হবে।

এসএসসি ২০২৩ সালের পৌরনীতি ও নাগরিকতা সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর সাজেশন্স

প্রশ্ন ১০: ঘটনা-১: রহিমপুর গ্রামের যুবক সম্প্রদায় ‘ধানসিঁড়ি’ নামক একটি সমিতি গঠন করেন। সমিতি কীভাবে পরিচালিত হবে, কী কী কাজ সম্পাদিত হবে তার একটি নীতিমালা বই আকারে প্রকাশ করা হয় এবং ঐ·সমিতির নিয়মনীতি লিপিবদ্ধ থাকে। সবাই এ নিয়মনীতি মেনে চলে।

ঘটনা-২: জনাব ‘খ’ ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য। নির্বাচিত হন। ঐ বছর সেপ্টেম্বর মাসে সংবিধান সংশোধনী বিলে তিনি ভোট প্রদান করেন। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন হয়।

ক. সংবিধান কী?
খ. কীভাবে ব্রিটেনের সংবিধান গড়ে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করো।
গ. ঘটনা-১-এ উল্লেখিত ‘ধানবিড়ি’ সমিতির নীতিমালা কোন ধরনের সংবিধানের সাথে মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ঘটনা-২-এর সরকার ব্যবস্থাটির বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করো।

১০ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক) যেসব নিয়মের মাধ্যমে একটি রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। তাকে সংবিধান বলে।

খ) ব্রিটিশ সংবিধান ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে।

সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতির মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি হল ব্রুমবিবর্তন পদ্ধতি। বিবর্তনের মাধ্যমে সংবিধান গড়ে উঠতে পারে। যেমনব্রিটেনের সংবিধান ক্রমবিববর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে লোকাচার ও প্রথার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে সংবিধান কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রণয়ন করা হয় না, ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। তাই বলা হয়, ব্রিটিশ সংবিধান তৈরি হয়নি, গড়ে উঠেছে।

গ) সৃজনশীল ৬ নম্বর প্রশ্নের ‘গ’ এর উত্তরের অনুরূপ।

ঘ) উদ্দীপকের ঘটনা ২-এর সরকার ব্যবস্থাটি হলো সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থা।

উদ্দীপকে ঘটনা ২-এ বলা হয়েছে, জনাব ‘খ’ ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ঐ বছর সেপ্টেম্বর মাসে সংবিধান সংশোধনী বিলে তিনি ভোট প্রদান করেন। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন হয়। এখানে বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন দল রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তে সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে।

যে সরকার ব্যবস্থায় শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং শাসন বিভাগের স্থায়ীত্ব ও কার্যকারিতা আইন বিভাগের উপর নির্ভরশীল তাকে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সংসদীয় পদ্ধতির সরকার বলে। এ সরকার ব্যবস্থায় সাধারণ নির্বাচনে সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী দল মন্ত্রিসভা গঠন করে। দলের আস্থাভাজন ব্যক্তি হন প্রধানমন্ত্রী। তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের মধ্য থেকে মন্ত্রী নিয়োগ এবং তাদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন। এ ধরনের সরকারে একজন নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান থাকেন। সংসদীয় সরকারে ও আইনসভা বা জাতীয় সংসদ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভা তাদের কাজের জন্য আইন পরিষদের নিকট দায়ী থাকে। ফলে ক্ষমতাসীন দল সরকারি কর্মকাণ্ডের জন্য আইনসভা বা জাতীয় সংসদের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে।

উপরের আলোচিত বিষয়গুলো সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থায় বিদ্যমান বৈশিষ্ট্য।

প্রশ্ন ১১: ‘X’ দেশের শাসক খুব স্বৈরাচারী। সে দেশের জনগণ আন্দোলন করে উক্ত শাসকের পতন ঘটায় এবং নতুন শাসকের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়। অপরদিকে, ক্রিকেটের মাঠে নাবিলের ডন নামের এক বন্ধুর সাথে পরিচয় হয়। তারা কথা প্রসঙ্গে উভয় দেশের সংবিধান। নিয়ে আলোচনা করছিল। ডন বলল, আমাদের দেশের সংবিধানে কোনো সমস্যা হলে অনায়াসেই সেটা বদলানো যায়, কিন্তু নাবিল বলল, আমাদের দেশে বদলানো কঠিন।

ক. সংবিধান কাকে বলে?
খ. ‘বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা।
গ. ‘X’ দেশটিতে সংবিধান প্রণয়নের কোন পদ্ধতি ফুটে উঠেছে।
ঘ. নাবিল ও ডনের দেশের সংবিধানের মধ্যে কোনটি তোমার কাছে গ্রহণযোগ্য? মতামত দাও। [চ. বো. ২০২০]

১১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক) যেসব নিয়মের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হয় তাকে সংবিধান বলে।

খ) বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করার মাধ্যমে মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা হয়েছে।

সংবিধান হলো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা কী কী অধিকার ভোগ করতে পারব তা সংবিধানে উল্লেখ থাকায় এগুলোর গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। জীবনধারণের অধিকার, চলাফেরার অধিকার, বাকস্বাধীনতার অধিকার, ধর্মচর্চার অধিকার, সম্পত্তির অধিকার ইত্যাদিসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার সংবিধানে উল্লেখ থাকায় কারও পক্ষে এগুলো লঙ্ঘন করা সম্ভব নয়। এভাবে বাংলাদেশের সংবিধানে নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।

গ) ‘x’ দেশটিতে বিপ্লবের দ্বারা সংবিধান প্রণয়নের পদ্ধতি ফুটে উঠেছে। কখনও কখনও বিপ্লবের মাধ্যমেও সংবিধান প্রণীত হয়। শাসক যখন ‘জনগণের স্বার্থ ও কল্যাণ নিহিত নয় এমন কোনো কাজ করে অর্থাৎ স্বৈরাচারী শাসকে পরিণত হয়, তখন বিপ্লবের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শাসকের পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন শাসকগোষ্ঠী শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করে নতুন সংবিধান তৈরি করে। রাশিয়া, কিউবা, চীন প্রভৃতি দেশের সংবিধান এ পদ্ধতিতে তৈরি হয়েছে।

উদ্দীপকে দেখা যায়, সে দেশে স্বৈরাচারী শাসক বিদ্যমান। তাই সে দেশের জনগণ আন্দোলন করে উক্ত শাসকের পতন ঘটায় এবং নতুন শাসকের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়, যা সংবিধান প্রণয়নের অন্যতম পদ্ধতি বিপ্লবের মাধ্যমে সংবিধান প্রণয়নকে নির্দেশ করে। কেননা জনগণের বিপ্লবের মাধ্যমে যে নতুন শাসক ক্ষমতা গ্রহণ করেন তিনি নতুন সংবিধান তৈরি করেন। তাই বলা যায়, ‘X’ দেশে বিপ্লবের দ্বারা সংবিধান প্রণয়নের পদ্ধতি প্রতিফলিত হয়েছে।

নাবিল ও জনের দেশের সংবিধানের মধ্যে মাবিলের দেশের সংবিধান অর্থাৎ দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান আমার কাছে গ্রহণযোগ্য।

ঘ) উদ্দীপকের ডনের দেশের সংবিধান সুপরিবর্তনীয়। কেননা তাদের দেশের সংবিধানে কোনো সমস্যা হলে অনায়াসেই সেটা বদলানো যায় অন্যদিকে, নাবিলের দেশের সংবিধান বদলানো কঠিন, যা দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের অনুরূপ। এ দুটি সংবিধানের মধ্যে নাবিলের দেশের সংবিধান অর্থাৎ দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান আমার কাছে গ্রহণযোগ্য।

দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট। অন্যদিকে, সুপরিবর্তনীয় সংবিধানে সাধারণত সুনির্দিষ্টতা ও সুস্পষ্টতা দেখা যায় না। দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান স্থিতিশীল বিধায় নাগরিক অধিকার রক্ষায় বেশি উপযোগী। আর সুপরিবর্তনীয় সংবিধান স্থিতিশীল নয় বলে জনসাধারণের অধিকার রক্ষায় তা তেমন সুদৃঢ় নয়। দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানে নাগরিকের মৌলিক অধিকার সংরক্ষিত হয়। কেননা এতে মৌলিক অধিকারগুলো লিপিবদ্ধ থাকে অন্যদিকে, সুপরিবর্তনীয় সংবিধান সহজে পরিবর্তন করা যায় বলে জনসাধারণের খেয়ালখুশি মতো ও রাজনৈতিক দলগুলোর মর্জিমাফিক তা পরিবর্তিত হয়। ফলে অনেক সময় এ সংবিধানের মৌলিকত্ব থাকে না এবং মাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

Leave a Reply