নবম-দশম শ্রেণির বা.বি.প : অধ্যায় ১২ - অর্থনৈতিক নির্দেশকসমূহ ও বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রকৃতি | এসএসসি ২০২০ সালের সহজ প্রশ্নোত্তর

নবম-দশম শ্রেণির বা.বি.প : অধ্যায় ১২ – অর্থনৈতিক নির্দেশকসমূহ ও বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রকৃতি

Education

অধ্যায় ১২
অর্থনৈতিক নির্দেশকসমূহ ও বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রকৃতি

  • উক্ত অধ্যায়ের প্রাথমিক আলোচনা নিম্নরূপ :

কোনো দেশের অর্থনীতির অবস্থা জানতে হলে সে দেশের মোট জাতীয় উৎপাদন, মোট অভ্যন্তরীণ বা দেশজ উৎপাদন ও জুনগণের মাথাপিছু আয় জানা প্রয়োজন। এগুলোকে বলা হয় অর্থনীতির নির্দেশক। কারণ এগুলো অর্থনীতির অবস্থা নির্দেশ করে। দেশের অর্থনীতি পূর্ববর্তী অবস্থার তুলনায় এগিয়ে যাচ্ছে, পিছিয়ে যাচ্ছে, নাকি একই অবস্থায় আছে, তা উক্ত নির্দেশকসমূহের মান দ্বারা বোঝা যায়। এগুলোর সাথে সাথে কৃষি, শিল্প, সেবা, এবং অন্যান্য খাতে উৎপাদনের অবস্থা কী, বিদেশ থেকে কর্মজীবী মানুষ যে অর্থ দেশে প্রেরণ করছে তা জাতীয় অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলছে- এ সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে দেশের অর্থনীতির অবস্থা ও গতিপ্রবাহ জানা সম্ভব।


প্রশ্ন ১। রাজশাহী বোর্ড ২০২০

জনাব আমজাদ সম্প্রতি ‘X’ নামক একটি দেশ নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেন। দেশটির কৃষি হলো অপ্রধান খাত। দেশের মানুষের ব্যাংকে অর্থ জমা রাখার হার ও বিনিয়োগের হার উচ্চ। জনাব আমজাদ তার নিবন্ধে ‘y’ নামক অন্য একটি দেশের সাথে তুলনা করে লিখেছেন, ” দেশের মানুষের জাতীয় উৎপাদনের একক বৃহত্তম খাত হলো কৃষি। দেশটি তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ ও জনগোষ্ঠীকে সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করতে পারে না। দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য অনুকূল নয়।

ক. সেবা কী?
খ. সুশাসনের অভাব দেশের শিল্প ও সেবা খাতের অগ্রগতিতে কেন অন্তরায় হিসেবে কাজ করে?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘X’ দেশটি উন্নয়নের মাত্রার ভিত্তিতে কোন ধরনের দেশ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আমজাদ সাহেবের উল্লিখিত ‘Y’ দেশটিকে ‘x’ মাত্রায় উন্নীত করার জন্য কী করা উচিত?– মতামত দাও।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক) উত্তরঃ যেকোনো অবস্তুগত দ্রব্য যার উপযোগ এবং বিনিময় মূল্য আছে, তাই সেবা ।

খ) উত্তরঃ শিল্প ও সেবা খাতের অগ্রগতির সাথে দেশে বিদ্যমান শাসনব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির সম্পর্ক রয়েছে। ফলে সুশাসনের অভাব শিল্প ও সেবা খাতের অগ্রগতির অন্তরায় হিসেবে কাজ করে।

সুশাসনের অভাব দেশে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের ইচ্ছাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। তাছাড়া সুশাসনের অভাব দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মনে ভয়ভীতি এনে দেয়। সার্বিকভাবে সুশাসনের অভাব অর্থনীতিতে ঝুঁকি বৃদ্ধি করে যা শিল্প ও সেবা খাতের অগ্রগতিতে অন্তরায় হিসেবে কাজ করে।

গ) উত্তরঃ উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘X’ দেশটি উন্নয়নের মাত্রার ভিত্তিতে একটি উন্নত দেশ।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে এবং এ উন্নয়ন দীর্ঘমেয়াদে অব্যাহত আছে এমন দেশকে উন্নত দেশ বলা হয়। উন্নত দেশগুলোর জনগণের মাথাপিছু আয় উচ্চ। ফলে এসব দেশে মানুষের জীবনযাত্রার মানও অত্যন্ত উন্নত। এসব দেশে আর্থসামাজিক অবকাঠামো অত্যন্ত উন্নত। শিল্পখাত সম্প্রসারিত, পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অর্থনীতির অনুকূল। এসব দেশের কৃষি ব্যবস্থা উন্নত ও অধিক উৎপাদনশীল হলেও তা অর্থনীতির অপ্রধান খাত। তাছাড়া জনগণের মাথাপিছু আয় উচ্চ হওয়ায় উচ্চ সঞ্চয় ও অধিক বিনিয়োগ হার লক্ষ করা যায়।

উদ্দীপকে ‘X’ নামক দেশে কৃষি হলো অপ্রধান খাত এবং সঞ্চয় ও “বিনিয়োগের হার উচ্চ যা উন্নত দেশের বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে। উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘x’ রাষ্ট্রেও উন্নত দেশের ন্যায় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। সুতরাং উন্নয়নের মাত্রার ভিত্তিতে ‘X’ একটি উন্নত দেশ।

ঘ) উত্তরঃ উদ্দীপকে আমজাদ সাহেবের উল্লিখিত ‘Y’ দেশ অর্থাৎ একটি অনুন্নত দেশকে ‘x’ তথা উন্নত দেশের মাত্রায় উন্নীত করার জন্য পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত।

উন্নত দেশের মাথাপিছু আয়, সঞ্চয়, বিনিয়োগ, জীবনযাত্রার মান প্রভৃতি উন্নত। অপরদিকে অনুন্নত দেশে প্রাথমিক পেশা তথা কৃষির প্রাধান্য, নিম্ন মাথাপিছু আয়, কম সঞ্চয় ও বিনিয়োগ এবং সম্পদের অপূর্ণাঙ্গ ব্যবহার ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। অনুন্নত দেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মসূচি নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে প্রথমেই অনুন্নত দেশে বিদ্যমান অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার কারণসমূহ চিহ্নিত করে সেসব থেকে উত্তরণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ লক্ষ্যে উন্নয়নের জন্য নীতিগত ভিত্তি প্রস্তুত করতে হবে এবং নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।

উদ্দীপকে ‘Y’ দেশে যেহেতু কৃষির প্রাধান্য রয়েছে, তাই সেদেশের কৃষিতে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অধিক উৎপাদনশীল করে তুলতে হবে। আবার শিল্প ও শিল্পোৎপাদন ব্যতীত অর্থনৈতিক সক্ষমতা তৈরি করা প্রায় অসম্ভব। তাই ‘Y’ দেশের শিল্পে বিরাজমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেসব সমাধানকল্পে দ্রুত শিল্পায়নের উদোগ গ্রহণ করতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আর্থসামাজিক অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা বড় চ্যালেঞ্জ, যা ‘Y’ দেশকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে উত্তরণ করতে হবে। এছাড়াও প্রকৃতিসৃষ্ট বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য পদক্ষেপ, রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করা, শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসার, সরকারি অনুদানের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ খাতগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি ‘Y’ দেশের অবস্থা উন্নত করার জন্য আবশ্যক।

সর্বোপরি দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার, জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারসাম্য আনয়ন ‘y’ দেশকে ‘x’ মাত্রায় উন্নীত করবে বলে আমি মনে করি।

প্রশ্ন ২। যশোর বোর্ড ২০২০

২০১০ সালের তিনটি দেশের মাথাপিছু আয়

A : দেশের মাথাপিছু আয় ৪৯৯০০-৮৫৩০০ মার্কিন ডলার
B : দেশের মাথাপিছু আয় ৭০০০-৯০০০ মার্কিন ডলার
C : দেশের মাথাপিছু আয় ৫০০-৭০০ মার্কিন ডলার

ক. প্রবৃদ্ধির হার কাকে বলে?
খ. ‘রূপকল্প-২০২১’ ঘোষণা করা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. ‘A’ দেশ কোন শ্রেণিভুক্ত? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর ‘B’ ও ‘C’ উভয় দেশই কৃষিনির্ভর? উত্তরের সপক্ষে মতামত দাও ।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক) উত্তরঃ কোনো দেশের জাতীয় আয়ের বার্ষিক বৃদ্ধির হারকে প্রবৃদ্ধির হার বলা হয়।

খ) উত্তরঃ উন্নয়নের জন্য নীতিগত ভিত্তি প্রস্তুত করতেই সরকার ‘রূপকল্প ২০২১’ ঘোষণা করেছে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জনের জন্য বর্তমান সরকার পরিকল্পিত উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্যোগের আওতায় সরকার ঘোষিত রূপকল্প ২০২১-এর আলোকে বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১ শীর্ষক পরিকল্পনা দলিল প্রস্তুত করেছে।

গ) উত্তরঃ প্রদত্ত ছকের ‘A’ দেশটি হলো উচ্চ আয়ের দেশ তথা একটি উন্নত দেশ।

উচ্চ আয়ের দেশসমূহ উন্নত দেশ হিসেবে স্বীকৃত । উন্নয়ন প্রক্রিয়া শীর্ষ পর্যায়ে পৌছানোর ফলেই এসব দেশ এই উন্নত অবস্থা অর্জন করেছে। এসব দেশের মাথাপিছু আয় এমন যে জনগণের সকল মৌলিক চাহিদা পূরণের পরও প্রচুর অর্থ উদ্বৃত্ত থাকে, যা সঞ্চয় ও মূলধন গঠনে ব্যয় হয়। এসব দেশ উদ্বৃত্ত অর্থ দিয়ে অধিকতর উন্নয়ন কার্যক্রম চালায় এবং উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে সহায়তা করে। যেমন- যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ এবং এশীয় দেশসমূহের মধ্যে জাপান ও সিঙ্গাপুর ‘উচ্চ আয়ের দেশ’ শ্রেণিভুক্ত।

দৃশ্যমান ছকের ‘A’ চিহ্নিত দেশটিও তদ্রূপ একটি উচ্চ আয়ের দেশ। এ ধরনের দেশে মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত। এসব দেশে আর্থসামাজিক অবকাঠামো অত্যন্ত উন্নত, শিল্পখাত সম্প্রসারিত, পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অর্থনীতির অনুকূলে। অতএব নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ‘A’ দ্বারা উচ্চ আয়ের দেশ তথা উন্নত দেশের কথা বলা হয়েছে।

ঘ) উত্তরঃ প্রদত্ত ছকে উল্লিখিত ‘B’ ও ‘c’ উভয় দেশই একইভাবে কৃষি নির্ভর নয় বলে আমি মনে করি। ‘B’ দ্বারা মধ্যম আয়ের দেশ তথা উন্নয়নশীল দেশকে নির্দেশ করা হয়েছে। আর ‘C’ দ্বারা নিম্ন আয়ের দেশ তথা অনুন্নত দেশকে নির্দেশ করা হয়েছে।

মধ্য আয়ের দেশসমূহ সাধারণত উন্নয়নশীল দেশ। তবে মধ্য আয়ের ২টি ভাগের মধ্যে উচ্চমধ্য আয়ের দেশগুলোর অবস্থান উন্নত। এসব দেশের জনগণের মৌলিক চাহিদার অনেকটাই পূরণ হয়েছে। দেশগুলো দ্রুত শিল্পায়িত হচ্ছে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো সামাজিক অবকাঠামোর দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী উন্নয়ন ঘটছে। ফলে কৃষির ওপর নির্ভরশীলতা কমছে। অপরদিকে, মাথাপিছু জাতীয় আয়ভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাসের সবচেয়ে নিচে রয়েছে নিম্ন আয়ের দেশ। এ দেশগুলোকে কোনো কোনো সময় উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করা হলেও মূলত এগুলো অনুন্নত দেশ। তবে এসব দেশের অধিকাংশে উন্নয়নের ধারা শুরু হয়েছে বেশ কিছুকাল থেকেই। পরিকল্পিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশগুলো কিছুটা উন্নয়নও অর্জন করেছে। সেজন্য অনেক ক্ষেত্রেই এ দেশগুলোকে অনুন্নত না বলে স্বল্পোন্নত দেশ বলা হয়। তবে অনুন্নত দেশের জনগণের বৃহদংশ খাদ্য, জীবিকা ও অন্যান্য প্রয়োজন পূরণের জন্য কৃষির ওপর নির্ভরশীল । এসব দেশে কৃষি জাতীয় উৎপাদনের একক বৃহত্তম খাত ৷ উদ্দীপকে দেখা যায়, B দেশের মাথাপিছু আয় ৭০০০ – ৯০০০ মার্কিন ডলার যা মধ্যম আয়ের দেশকে নির্দেশ করে। আর দেশের মাথাপিছু আয় ৫০০-৭০০ মার্কিন ডলার যা নিম্ন আয়ের দেশকে নির্দেশ করে। সাধারণত মধ্যম আয়ের দেশ কম মাত্রায় কৃষিনির্ভর আর নিম্ন আয়ের দেশ অধিক মাত্রায় কৃষিনির্ভর।

পরিশেষে তাই আমি মনে করি, ‘B’ ও ‘C’ উভয় দেশই কৃষিনির্ভর নয়।

প্রশ্ন ৩। সিলেট বোর্ড ২০২০

দৃশ্যপট ১ : ‘M’ নামক দেশের অধিকাংশ লোক কৃষির ওপর নির্ভরশীল । উক্ত দেশটিতে কাজের ক্ষেত্রে কিছু করা বা ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতার অভাব রয়েছে। উক্ত দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যও অনুকূলে নয় ।

দৃশ্যপট ২ : ‘N’ এর একমাত্র সম্বল পৈতৃকসূত্রে প্রাপ্ত অল্প জমি। আর্থিক অসচ্ছলতায় তার চাষাবাদ করাটা কষ্টকর হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধাদি পেয়ে তিনি নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।

ক. প্রবৃদ্ধির হার কী?
খ. মোট জাতীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র চূড়ান্ত দ্রব্য হিসাব করা হয় কেন?
গ. দৃশ্যপট-১ এ বর্ণিত দেশটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাত্রার ভিত্তিতে কোন ধরনের দেশ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. দৃশ্যপট-২ এ উল্লিখিত ক্ষেত্রের অনগ্রসরতা দূর করতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপটি কি যথেষ্ট? মতামত দাও।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক) উত্তরঃ অর্থনৈতিক সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাই হলো প্রবৃদ্ধির হার ।

খ) উত্তরঃ চূড়ান্ত দ্রব্যের মধ্যে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক দ্রব্যের দাম অন্তর্ভুক্ত থাকে বলে মোট জাতীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে শুধু চূড়ান্ত দ্রব্য হিসাব করা হয় । অনেক দ্রব্যই চূড়ান্ত পর্যায়ে বাজারে আসার আগে প্রাথমিক দ্রব্য ও মাধ্যমিক দ্রব্য হিসেবে একাধিকবার ক্রয়-বিক্রয় হয়। ভোগকারীর ক্রয়ের পর দ্রব্যটি আর ক্রয়-বিক্রয় হয় না। মোট জাতীয় উৎপাদন নির্ণয়ের জন্য প্রত্যেক ধাপেই দ্রব্যটির হিসাব করা হলে জাতীয় উৎপাদনের পরিমাণ সঠিক হবে না। তাই মোট জাতীয় উৎপাদন নির্ণয়ের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র চূড়ান্ত পর্যায়ের দ্রব্যটিই হিসাব করতে হবে।

গ) উত্তরঃ দৃশ্যপট-১ এ বর্ণিত দেশটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাত্রার ভিত্তিতে একটি অনুন্নত দেশ।

অনুন্নত দেশের প্রধান বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণ হলো উন্নত দেশের তুলনায় জনগণের অত্যন্ত ‘কম মাথাপিছু আয় এবং জীবনযাত্রার নিম্নমান। জনগণের বৃহত্তর অংশেরই মৌলিক চাহিদাসমূহ, যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা সুবিধা ইত্যাদি পূরণ করার সামর্থ্য থাকে না। অনুন্নত।

দেশের জনগণের বৃহদংশ খাদ্য, জীবিকা ও অন্যান্য প্রয়োজন পূরণের জন্য কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষি জাতীয় উৎপাদনের একক বৃহত্তম খাত। উদ্দীপকে M দেশের অধিকাংশ লোক কৃষির ওপর নির্ভরশীল এবং উক্ত দেশে কাজের ক্ষেত্রে কিছু করা বা ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা কম এসবই অনুন্নত দেশের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এ ধরনের দেশের আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্যে সবসময়ই ঘাটতি থাকে। তাছাড়া অনুন্নত দেশের জনগণের উদ্যোগ ও ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতার যথেষ্ট অভাব দেখা যায়। ফলে অর্থনীতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার হয় না এবং অনুন্নয়ন দীর্ঘমেয়াদি হয়। এছাড়াও মূলধন গঠন ও বিনিয়োগের নিম্নহার, অনুন্নত শিল্পখাত, অদক্ষ জনশক্তি, দুর্বল আর্থসামাজিক অবকাঠামো প্রভৃতি বৈশিষ্ট্য অনুন্নত দেশসমূহে বিরাজমান থাকে। অতএব নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ‘M’ দেশটি একটি অনুন্নত দেশ।

ঘ) উত্তরঃ দৃশ্যপট-২ এ উল্লিখিত ক্ষেত্র তথা কৃষিক্ষেত্রে অনগ্রসরতা দূর করতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ যথেষ্ট বলা যায় ।

সরকার বিবিধ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে বাধার মোকাবিলা করছে। এসব নীতির মধ্যে রয়েছে ‘জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি’, ‘জাতীয় বীজ নীতি’, ‘সমন্বিত সার বিতরণ নীতিমালা’ এবং ‘সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা’ । এছাড়া ‘জাতীয় কৃষি নীতি ১৯৯৯’ অনুসারে কৃষি উন্নয়নের কাজ চলছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও হাওর এলাকায় পরিকল্পিত পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে কৃষিজমির আওতা সম্প্রসারণ, কৃষি উপকরণে ভর্তুর্কি বৃদ্ধি, ন্যায্যমূল্যে কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা ও কৃষকদের কাছে এগুলোর সরবরাহ নিশ্চিতকরণ; দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহার করে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ ও কৃষকদের কাছে সেচ যন্ত্রপাতির সহজলভ্যতা বৃদ্ধি; উন্নতমানের উচ্চ ফলনশীল বীজ উৎপাদন ও সরবরাহ ইত্যাদি খাতে অধিকতর বিনিয়োগ; ফসল সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা, কৃষিজাত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করা এবং সকল কৃষিজাত পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা; সার ব্যবহার সুষমকরণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সারের আমদানি খরচের ওপর ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত রাখা; ব্যাংক ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রাখা; সম্প্রতি বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকসহ বাংলাদেশে কার্যরত সকল তফসিলি ব্যাংকে কৃষিঋণ কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি প্রণয়ন ।

সরকারের গৃহীত এসব পদক্ষেপের ফলেই উদ্দীপকের ‘N’ সরকারি সুবিধা গ্রহণ করে নতুনভাবে স্বপ্ন দেখেন।

পরিশেষে তাই আমি মনে করি, সরকারের গৃহীত উপরিউক্ত পদক্ষেপ যথেষ্ট।

প্রশ্ন ৪। দিনাজপুর বোর্ড ২০২০

প্রশ্ন ৪। দিনাজপুর বোর্ড ২০২০

ক. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কাকে বলে?
খ. চূড়ান্ত দ্রব্য বলতে কী বোঝায়?
গ. উন্নয়নের মাত্রার ভিত্তিতে ‘Q’ কে কোন আয়স্তরের দেশ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘R’ আয়ভিত্তিক দেশকে ‘P’ আয়ভিত্তিক দেশে রূপান্তরে ‘M’ ও ‘N’ এর উল্লিখিত কোন মাধ্যমটি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে? মতামত দাও।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক) উত্তরঃ কোনো দেশের জাতীয় আয়ের বার্ষিক বৃদ্ধির হারকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলে।

খ) উত্তরঃ যেসব দ্রব্য অন্য দ্রব্যের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় না তাকে চূড়ান্ত দ্রব্য বলে।

চূড়ান্ত দ্রব্য হলো দ্রব্যের সেই রূপ যা সরাসরি ভোগের জন্য উপযোগী। দ্রব্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে ভোক্তা তা ক্রয় করে ও ভোগ করে থাকে। উৎপাদনের উদ্দেশ্য হলো এই চূড়ান্ত দ্রব্য তৈরি, যাতে এক বা একাধিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দ্রব্যের সংমিশ্রণ ঘটে থাকে।

গ) উত্তরঃ উন্নয়নের মাত্রার ভিত্তিতে প্রদত্ত ছকের ‘Q’ কে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

মধ্যম আয়ের দেশসমূহ সাধারণত উন্নয়নশীল দেশ, যাদের মাথাপিছু আয় উন্নত দেশের তুলনায় কম হলেও বর্ধনশীল রয়েছে। অনুন্নত দেশসমূহের সাথে এ জাতীয় দেশের পার্থক্য হলো এসব দেশ পরিকল্পিত উপায়ে উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে মোট জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ও তা বৃদ্ধির প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে। মধ্য আয়ের দেশগুলোর আয়ভিত্তিক শ্রেণি হলো ১০০৬ ডলার থেকে ১২২৭৫ ডলার পর্যন্ত। তবে এ ব্যাপক ব্যবধানের পরিসর কমাতে আবার উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ ও নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে একে বিভাজন করা হয়। সেক্ষেত্রে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের আয় ধরা হয় ৩৯৭৬ ডলার থেকে ১২২৭৫ ডলার আর নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হলো ১০০৬-৩৯৭৫ ডলার মাথাপিছু আয়ের দেশ। উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশগুলোর অবস্থান উন্নত ও এসব দেশে জনগণের মৌলিক অধিকার অনেকটাই পূরণ হয়েছে।

ঘ) উত্তরঃ উদ্দীপকের ছকে ‘Q’ দেশটির মাথাপিছু আয় দেখানো হয়েছে ৭,৯০০ মার্কিন ডলার, যা মধ্যম আয়ের দেশের অন্তর্ভুক্ত। আরও গভীর পর্যালোচনায় দেশটিকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

উদ্দীপকে ছকে ‘P’ দেশের মাথাপিছু আয় ৪৯,৯০০ মার্কিন ডলার ও ‘R’ দেশের মাথাপিছু আয় ১,৪৬০ মার্কিন ডলার। মাথাপিছু আয়ভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাসের দৃষ্টিকোণ হতে ‘P’ একটি উন্নত দেশ ও ‘R’ একটি নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। ‘R’ আয়ভিত্তিক দেশকে ‘P’ আয়ভিত্তিক দেশে রূপান্তরে ‘M’ ও ‘N’ এর মধ্যে ‘N’ মাধ্যমটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এক্ষেত্রে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলো সাধারণত উন্নয়নশীল দেশ, হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এসব দেশের অধিকাংশে বেশ কিছুকাল থেকেই উন্নয়নের ধারা শুরু হয়েছে বলে প্রতিভাত হয়। এসব দেশে কৃষির প্রাধান্য থাকলেও কৃষি ব্যবস্থা সর্বোচ্চ উৎপাদনশীল নয়। তাই ‘P’ দেশের ন্যায় হতে চাইলে ‘R’ দেশের কৃষি উৎপাদন আরও উন্নত ও আধুনিক করতে হবে, যা ‘M’ দ্বারা চিহ্নিত। কিন্তু ‘P’ এর ন্যায় উন্নত দেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর নয়। উন্নত দেশসমূহে আর্থসামাজিক অবকাঠামো অত্যন্ত উন্নত। শিল্পখাত সম্প্রসারিত, পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অর্থনীতির অনুকূল। এসব দেশের সকল জনগণের আবাসন, শিক্ষা সুবিধা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত রয়েছে। উদ্দীপকের ‘R’ দেশটিকে ‘P’ তে রূপান্তরিত করতে চাইলে অর্থাৎ ‘p. এর উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ পরিকল্পনা ‘M’ দ্বারা তথা উন্নত ও আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব নয়। অপরদিকে, পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় উন্নত কৃষি ব্যবস্থাসহ উন্নত দেশের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলোও ‘R’ রাষ্ট্রের পক্ষে অর্জন করা সম্ভব হবে।

সুতরাং ‘R’ আয়ভিত্তিক দেশকে ‘P’ আয়ভিত্তিক দেশে রূপান্তরে পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মসূচি তথা ‘N’ মাধ্যমটি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

Leave a Reply