সকল বোর্ড ২০২০ সালের বিজ্ঞান এসএসসি পরীক্ষার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর | নতুন পাঠ্যবইয়ের আলোকে (অধ্যায় ০৮ : আমাদের সম্পদ) এর সাজেশন্স

সকল বোর্ড ২০২০ সালের বিজ্ঞান এসএসসি পরীক্ষার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

Education

 নতুন পাঠ্যবইয়ের আলোকে (অধ্যায় ০৮ : আমাদের সম্পদ) এর সাজেশন্স

অধ্যায় ০৮ : আমাদের সম্পদ

  • প্রাথমিক আলোচনা :

ভূপৃষ্ঠের যে নরম স্তরে গাছপালা জন্মে ও গাছ পুষ্টি শোষণ করে বড় হয় তাকে মাটি বলে। বিভিন্ন প্রকার জৈব পদার্থ, অজৈব পদার্থ, পানি ও বায়ু দ্বারা মাটি গঠিত হয়। মাটির গঠন, বর্ণ, পানি ধারণক্ষমতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মাটি ৪ প্রকার। যথা- বেলে মাটি, পলি মাটি, কাদা মাটি এবং দো-আঁশ মাটি। আমাদের অতি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ এ মাটিকে দূষণের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য সকলের সচেতনতা আবশ্যক। একই সাথে আমাদের বহুল ব্যবহৃত খনিজ সম্পদ প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ও পেট্রোলিয়াম সংরক্ষণেও সচেতন হতে হবে। এক্ষেত্রে সৌরশক্তি, বায়ুপ্রবাহ, পানির স্রোত ইত্যাদিকে কাজে লাগিয়ে আমরা প্রাকৃতিক জ্বালানির উপর চাপ কমাতে পারি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শক্তি সংরক্ষণ করতে পারি ।


প্রশ্ন ১. ঢাকা বোর্ড ২০২০

প্রশ্ন ১. ঢাকা বোর্ড ২০২০

ক. টপ সয়েল কী?
খ. কীভাবে মাটি সংরক্ষণ করা যায়?
গ. A-মাটির গঠন বর্ণনা কর।
ঘ. C-মাটির তুলনায় B-মাটিতে ফসল ভালো উৎপন্ন হয়— বিশ্লেষণ কর।

১নং প্রশ্নের উত্তরঃ

ক) উত্তরঃ মাটির সবার উপরের স্তর হলো হরাইজোন A, যা টপসয়েল নামে পরিচিত।

খ) উত্তরঃ মাটি আমাদের একটি অতি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ । নিচে মাটি সংরক্ষণের কৌশলগুলো আলোচনা করা হলো-

১. মাটি সংরক্ষণের সবচেয়ে কার্যকর বং সহজ কৌশল হলো মাটিতে বেশি করে গাছ লাগানো।

২. রাসায়নিক সারের পরিবর্তে যতটুকু সম্ভব জৈব সার ব্যবহার বৃষ্টিপাতে মাটির ক্ষয় হয় না।

৩. একই জমিতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফসল চাষ করেও মাটির ক্ষয় রোধ করা যায়।

৪. এছাড়া নদীর পাড়ে কলমি, ধনচে ইত্যাদি গাছ লাগিয়ে, নদী অধিক খরস্রোতা হলে নদীর পাড়ে বালুর বস্তা ফেলে বা কংক্রিটের তৈরি ব্লক দিয়েও নদী ভাঙনের হাত থেকে মাটি সংরক্ষণ করা যায় ।

গ) উত্তরঃ উদ্দীপকে A-মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা খুবই কম। অর্থাৎ A-মাটি হলো বালু মাটি । নিচে বালু মাটির গঠন বর্ণনা করা হলোবালু মাটি দানাযুক্ত। বালু মাটিতে খুব ছোট ছোট শিলা আর খনিজ পদার্থ থাকে। বালু মাটিতে বিদ্যমান মাটির কণার আকার সবচেয়ে বড়, যার ফলে কণাগুলোর মাঝে ফাঁকা জায়গা অনেক বেশি থাকে, তাই অনেক বেশি বায়বায়ন হয়। বালু মাটিতে হিউমাস থাকলে এটি চাষাবাদের জন্য সহজসাধ্য, কিন্তু যেহেতু এ মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা কম, তাই পানি দিলে তা দ্রুত নিষ্কাশিত হয়ে যায় এবং গ্রীষ্মকালে বিশেষ করে উদ্ভিদে পানির স্বল্পতা দেখা যায়। তাই যে সকল ফসলাদিতে অনেক বেশি পানি লাগে সেগুলো বালু মাটিতে ভালো হয় না। তবে যখন প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়, যার কারণে জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সেসব ক্ষেত্রে বালু মাটি চাষাবাদের জন্য উপযোগী হয়ে উঠতে পারে।

সারকথা : A-মাটি হলো বালু মাটি। বালু মাটি দানাযুক্ত। বালু মাটিতে খুব ছোট ছোট শিলা আর খনিজ পদার্থ থাকে।

ঘ) উত্তরঃ উদ্দীপকে B ও C মাটি হলো যথাক্রমে পলিমাটি ও কাদামাটি নিচে কাদামাটির তুলনায় পলিমাটিতে ফসল ভালো উৎপন্ন হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করা হলো-

কাদামাটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এরা প্রচুর পানি ধারণ করতে পারে। এ মাটিতে মাটির কণাগুলো খুব সূক্ষ্ম হয়। ফলে কণাগুলোর মধ্যকার রন্ধ্র খুব ছোট আর সরু হয়। তাই কাদা মাটি থেকে সহজে পানি নিষ্কাশিত হয় না। এ জাতীয় মাটিতে সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তাই ফসলাদি বা উদ্ভিদের মূলে পচন সৃষ্টি হয়। কাদা মাটিতে ফসল চাষের জন্য জৈব সার দেওয়াও অত্যাবশ্যকীয় হয়ে থাকে। অপরদিকে পলি মাটির পানি ধারণক্ষমতা মাঝারি হলেও পলি মাটি খুবই উর্বর হয় আর মাটির কণাগুলো অপেক্ষাকৃত আকারে ছোট হয়। পলি মাটির কণাগুলো ছোট হওয়ায় এরা পানিতে ভাসমান আকারে থাকে এবং এক পর্যায়ে পানির নিচে থাকা জমিতে পলির আকারে জমা পড়ে। এছাড়া পলি মাটিতে জৈব পদার্থ এবং এতে উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদান বেশি থাকে। তাই কাদামাটির তুলনায় পলিমাটিতে ফসল ভালো উৎপন্ন হয়।

সারকথা : B ও C মাটি হলো যথাক্রমে পলিমাটি ও কাদামাটি। পলি মাটিতে জৈব পদার্থ এবং এতে উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদান বেশি থাকে। তাই পলিমাটিতে ফসল ভালো উৎপন্ন হয়।

প্রশ্ন ২. কুমিল্লা বোর্ড ২০২০

রুমাইতা গাড়িতে ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জ যাচ্ছিল। পথিমধ্যে তাদের গাড়িটি সিএনজি পাম্প স্টেশনে এক ধরনের জ্বালানি নেওয়ার জন্য থামে। তাদের বাসায় রান্নার জন্য জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত উপকরণের সঙ্গে সে এর মিল খুঁজে পেল। সে যাওয়ার পথে বাস থেকেই লক্ষ করলো একজন লোক দা, বটি তৈরির জন্য কালো বর্ণের আর এক ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করছে।

ক. মাটির বায়বায়ন কাকে বলে?
খ. কাদামাটি দিয়ে কেন ঘর সাজানোর তৈজসপত্র তৈরি করা হয়?
গ. উল্লিখিত প্রথম জ্বালানিটির প্রক্রিয়াকরণ ব্যাখ্যা কর। ঘ. উল্লিখিত দুটি জ্বালানির মধ্যে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিদ্যুত্থক্ষেত্রে একটির ব্যবহার বেশি হলেও পৃথিবীর সব দেশেই অন্যটির ব্যবহার বেশি- বিশ্লেষণ কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক) উত্তরঃ মাটিতে থাকা গ্যাসের সাথে বায়ুমণ্ডলে থাকা বাতাসের গ্যাসের বিনিময় হয় অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলের গ্যাস মাটিতে যায় এবং মাটিতে থাকা গ্যাস বায়ুমণ্ডলে চলে আসে। এ প্রক্রিয়াকে মাটির বায়বায়ন বলে।

খ) উত্তরঃ কাদামাটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এ মাটি প্রচুর পানি ধারণ করতে পারে। ঐ মাটি অনেকটা আঠালো ধরনের হয় এবং হাত দিয়ে ধরলে হাতে লেগে থাকে। কাদামাটির এ বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্য এটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মৃৎশিল্প যেমন- ঘর সাজানোর তৈজসপত্র তৈরি করা হয়।

গ) উত্তরঃ উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রথম জ্বালানিটি হলো প্রাকৃতিক গ্যাস। নিচে প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রক্রিয়াকরণ ব্যাখ্যা করা হলো-

প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রক্রিয়াকরণ একটি জটিল শিল্পপ্রক্রিয়া, যেটি কয়েক ধাপে সম্পন্ন হয়। সাধারণভাবে যেখানে গ্যাসকূপ পাওয়া যায়, সেখানেই প্রক্রিয়াকরণ সম্পন্ন করা হয়। প্রক্রিয়াকরণ অনেকাংশে নির্ভর করে গ্যাসের গঠন অর্থাৎ এতে বিদ্যমান অন্যান্য পদার্থের ওপর।

সাধারণত গ্যাসকূপে গ্যাস ও তেল একসাথে থাকে। তাই প্রথমে তেলকে আলাদা করা হয়। এরপর প্রাকৃতিক গ্যাসে থাকা বেনজিন ও বিউটেন ঘনীভূত করে আলাদা করা হয়। প্রাকৃতিক গ্যাসে থাকা পানি দূর করার জন্য নিরুদকের মধ্যে দিয়ে চালনা করা হয়। অতঃপর গ্যাসে থাকা দূষণীয় পদার্থ হাইড্রোজেন সালফাইড (H2S) এবং CO, পৃথক করা হয়। আবার প্রাপ্ত গ্যাসের মিশ্রণ থেকে নাইট্রোজেনকে আলাদা করা হয়। এ অবস্থায় প্রাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাসই বিশুদ্ধ মিথেন গ্যাস। যা পাইপ লাইনের মাধ্যমে সঞ্চালন করে ব্যবহার উপযোগী করা হয়।

কৃতিক গ্যাসের প্রক্রিয়াকরণ

সারকথা : প্রথম জ্বালানিটি হলো প্রাকৃতিক গ্যাস। প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রক্রিয়াকরণ একটি জটিল শিল্পপ্রক্রিয়া, যেটি কয়েক ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রক্রিয়াকরণ অনেকাংশে নির্ভর করে গ্যাসের গঠন অর্থাৎ এতে বিদ্যমান অন্যান্য পদার্থের ওপর।

ঘ) উত্তরঃ উদ্দীপকে উল্লিখিত দুটি জ্বালানি হলো প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লা। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বেশি হলেও পৃথিবীর অন্য সব দেশেই কয়লার ব্যবহার বেশি। নিচে বিষয়টি বিশ্লেষণ করা হলো-

প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের প্রধান খনিজ সম্পদ। বাংলাদেশে বর্তমানে ১৭টি গ্যাসক্ষেত্রের ৭৯টি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছেবাংলাদেশে বাণিজ্যিক জ্বালানি ব্যবহারের ৭৫% পূরণ করে এ গ্যাসযার অধিকাংশই বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এদেশে কয়লার তুলনায় প্রাকৃতিক গ্যাসের পর্যাপ্ততা বেশি বলে সরকার গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনেই আগ্রহী হয়ে থাকে। যদিও প্রাকৃতিক গ্যাস দেশীয় প্রযুক্তিতে উত্তোলন করা সম্ভব না হওয়ায় বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে উত্তোলন করানো হয় বলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কিছুটা ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো কয়লাও একটি জীবাশ্ম জ্বালানি। পৃথিবীর অন্য সব দেশেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার খুবই বেশি। কেননা আমেরিকা, ইউরোপ, ওশেনিয়াসহ এশিয়া ও আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাসের তুলনায় কয়লার পর্যাপ্ততা বেশি। তাই সেসব দেশে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া উন্নত প্রযুক্তি ও কয়লা উত্তোলন তুলনামূলক সহজসাধ্য হওয়ায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সাশ্রয়ী হয়ে থাকে।

অতএব উত্তরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, মূলত পর্যাপ্ততার উপর ভিত্তি করেই প্রতিটি দেশে গ্যাসভিত্তিক বা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হয়ে থাকে।

সারকথা : উল্লিখিত দুটি জ্বালানি হলো প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লা। উন্নত প্রযুক্তি ও কয়লা উত্তোলন তুলনামূলক সহজসাধ্য হওয়ায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সাশ্রয়ী হয়ে থাকে।

প্রশ্ন ৩. সিলেট বোর্ড ২০২০

আশরাফ সাহেব কয়লা খনিতে চাকরি করেন। তিনি কয়লা আহরণে শ্রমিকদের নেতৃত্ব দেন। অন্যদিকে শাহজাহান মিয়া একজন কৃষক। তিনি ফসল তোলার পর ফসলের গোড়া জমিতে রেখে দেন।

ক. জীবাশ্ম জ্বালানি কাকে বলে?
খ. জৈব পদার্থকে মাটির জীবন বলা হয় কেন?
গ. আশরাফ সাহেবের প্রতিষ্ঠান কিভাবে মাটি দূষণ করেছেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মাটি সংরক্ষণে শাহজাহান মিয়ার কর্মকাণ্ড কতটুকু যুক্তিযুক্ত? তোমার মতামত দাও।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক) উত্তরঃ কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, পেট্রোলিয়াম প্রভৃতি জ্বালানিকে একসাথে জীবাশ্ম জ্বালানি বলে ।

খ) উত্তরঃ মাটিতে বিদ্যমান জৈব পদার্থ হিউমাস নামে পরিচিত। হিউমাস তৈরি হয় মৃত গাছপালা ও প্রাণীর দেহাবশেষ থেকে। এটি মাটিতে বিদ্যমান প্রয়োজনীয় অণুজীবের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া জৈব পদার্থ মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে গাছপালা সহজেই মাটি থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে। তাই জৈব পদার্থকে মাটির জীবন বলা হয় ।

গ) উত্তরঃ উদ্দীপকে আশরাফ সাহেবের প্রতিষ্ঠান হলো কয়লা খনি। এ খনি থেকে কয়লা আহরণ করা হয়। কয়লা আহরণের ফলে যেভাবে মাটি দূষণ ঘটে তা নিচে বর্ণনা করা হলো-

খনি থেকে কয়লা আহরণের সময় প্রচুর মাটি খনন করে সরিয়ে ফেলতে হয়। এতে যেমন বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ফসলহানি ঘটে, ঠিক তেমনি মাটি দূষণের ফলে মাটির উর্বরতাও নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি অনেক সময় এর ফলে সৃষ্ট মাটি ক্ষয়ের কারণে তা আশপাশের জলাভূমি ভরাট করে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাতে পারে।

কয়লা খনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বন এলাকায় থাকে, যে কারণে খনি খননের কারণে বনজ সম্পদ ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয় ঘটে। যার ফলে ঐ সকল স্থানে মাটি দূষণ ঘটে। এছাড়া খনিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা (যা সচরাচর ঘটেই চলেছে) ঘটলে তা আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার মাটির উৎপাদনশীলতা নষ্ট করে মাটি দূষণ ঘটায় ।

সারকথা : খনি থেকে কয়লা আহরণের সময় প্রচুর মাটি খনন করে সরিয়ে ফেলতে হয়। এতে যেমন বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ফসলহানি ঘটে, ঠিক তেমনি মাটি দূষণের ফলে মাটির উর্বরতাও নষ্ট হয়ে যায়।

ঘ) উত্তরঃ মাটি আমাদের একটি অতি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অত্যাবশ্যকীয় এ উপাদানটি নানাভাবে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে এবং এর উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। মাটির এ ক্ষয় বন্ধ করা না গেলে এটি আমাদের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হতে পারে। মাটির ক্ষয় বন্ধ করার মাধ্যমে মাটি সংরক্ষণ করা সম্ভব। মাটি সংরক্ষণের অন্যতম একটি কৌশল হলো জমিতে ফসল তোলার পর গোড়া উপড়ে না তুলে a জমিতে রেখে দেওয়া। এতে একদিকে যেমন জমির উর্বরতা বাড়ে, অন্যদিকে তেমন জমির ক্ষয়ও কমে যায়। উদ্দীপকের শাহজাহান মিয়া ফসল তোলার পর ফসলের গোড়া জমিতে রেখে দেন। তার এ কর্মকাণ্ড মাটি সংরক্ষণের জন্য খুবই যুক্তিযুক্ত একটি পদক্ষেপ।

সারকথা : মাটি সংরক্ষণের অন্যতম একটি কৌশল হলো জমিতে ফসল তোলার পর গোড়া উপড়ে না তুলে জমিতে রেখে দেওয়া। এতে একদিকে যেমন জমির উর্বরতা বাড়ে, অন্যদিকে তেমন জমির ক্ষয়ও কমে যায়।

প্রশ্ন ৪. দিনাজপুর বোর্ড ২০২০

তমালের বাবা স্বর্ণের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরির সময় কয়লা ব্যবহার করেন। তাদের গ্রামে হঠাৎ করে বন্যা হওয়ায় তার বাবা রান্নার সুবিধার্থে গ্যাসের সিলিন্ডার কিনে আনেন। বন্যার সময় এক ধরনের তলানী জমা হওয়ায় পরবর্তীতে তমালদের এলাকার জমিতে খুব ভালো ফসল উৎপাদিত হয়।

ক. মাটি কাকে বলে?
খ. উদ্ভিদের জন্য মাটির বায়বায়ন গুরুত্বপূর্ণ কেন?
গ. তমালদের এলাকার জমিতে ভালো ফসল উৎপাদনের কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে স্বর্ণ তৈরির কাজে ব্যবহৃত উপকরণ ও রান্নার সুবিধার্থে ব্যবহৃত উপকরণ দুটির মধ্যে কোনটির প্রক্রিয়াকরণ একটি জটিল শিল্প প্রক্রিয়া? তুলনামূলক আলোচনা করে মতামত দাও।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক) উত্তরঃ বিভিন্ন রকম জৈব ও অজৈব রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণকে মাটি বলে।

খ) উত্তরঃ মাটিতে থাকা গ্যাসের সাথে বায়ুমণ্ডলে থাকা বাতাসের গ্যাসের বিনিময় হয় অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলের গ্যাস মাটিতে যায় এবং মাটিতে থাকা গ্যাস বায়ুমণ্ডলে চলে আসে। এ প্রক্রিয়াকে মাটির বায়বায়ন বলে। মাটিতে নানারকম উপকারী অণুজীব থাকে, যা উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয়। এর মধ্যে কিছু অণুজীবের বেড়ে উঠার জন্য অক্সিজেন অত্যাবশ্যক। অক্সিজেন না থাকলে এরা বাঁচতে পারে না। আবার অক্সিজেন পানিতে অদ্রবণীয় খনিজ পদার্থকে ভেঙে দ্রবণীয় পদার্থে পরিণত করে, যা পরে মাটিতে থাকা পানির দ্বারা উদ্ভিদে স্থানান্তরিত হয় এবং এর মাধ্যমে উদ্ভিদ প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করে। উপরোক্ত এসব কারণেই উদ্ভিদের জন্য মাটির বায়বায়ন গুরুত্বপূর্ণ ।

গ) উত্তরঃ উদ্দীপকে বন্যার সময় এক ধরনের তলানী জমা হওয়ায় পরবর্তীতে তমালদের এলাকার জমিতে ভালো ফসল উৎপাদিত হয়েছে।

নিচে ভালো ফসল উৎপাদনের কারণ ব্যাখ্যা করা হলো-

বন্যার সময় জমিতে যে তলানী জমা হয়, তা মূলত পলিমাটি। পলিমাটির কণাগুলো ছোট হওয়ায় এরা পানিতে ভাসমান আকারে থাকে এবং এক পর্যায়ে পানির নিচে থাকা জমিতে পলির আকারে জমা পড়ে। পলি মাটিতে জৈব পদার্থ ও খনিজ পদার্থ থাকে। পলি মাটি খুবই উর্বর হয় এবং এ মাটির পানি ধারণক্ষমতাও তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। এছাড়া এতে উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদান বেশি থাকে বলে, পলি মাটিতে সব রকম ফসলই ভালো উৎপাদিত হয়।

অতএব উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, তমালদের এলাকার জমিতে বন্যার সময় পলি জমা হওয়ায় পরবর্তীতে জমিতে ভালো ‘ফসল উৎপাদিত হয়েছে।

সারকথা : তমালদের এলাকার জমিতে বন্যার সময় পলি জমা হওয়ায় পরবর্তীতে জমিতে ভালো ফসল উৎপাদিত হয়েছে।

ঘ) উত্তরঃ উদ্দীপকে স্বর্ণ তৈরির কাজে এবং রান্নার সুবিধার্থে ব্যবহৃত উপকরণ দুটি হলো যথাক্রমে কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাস। কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাস প্রক্রিয়াজাতকরণের মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস প্রক্রিয়াজাতকরণ একটি জটিল শিল্প প্রক্রিয়া। নিচে এর সপক্ষে তুলনামূলক আলোচনা করে মতামত দেওয়া হলো-

প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রক্রিয়াকরণ একটি শিল্পপ্রক্রিয়া, যেটি কয়েক ধাপে সম্পন্ন হয়। সাধারণভাবে যেখানে গ্যাসকূপ পাওয়া যায়, সেখানেই প্রক্রিয়াকরণ সম্পন্ন করা হয়। প্রক্রিয়াকরণ অনেকাংশে নির্ভর করে গ্যাসের গঠন অর্থাৎ এতে বিদ্যমান অন্যান্য পদার্থের ওপর। সাধারণত গ্যাসকূপে গ্যাস ও তেল একসাথে থাকে। তাই প্রথমে তেলকে আলাদা করা হয়। এরপর প্রাকৃতিক গ্যাসে থাকা বেনজিন ও বিউটেন ঘনীভূত করে আলাদা করা হয়। প্রাকৃতিক গ্যাসে থাকা পানি দূর করার জন্য নিরুদকের মধ্যে দিয়ে চালনা করা হয়। অতঃপর গ্যাসে থাকা দূষণীয় পদার্থ হাইড্রোজেন সালফাইড (H2S) এবং CO2 পৃথক করা হয়। আবার প্রাপ্ত গ্যাসের মিশ্রণ থেকে নাইট্রোজেনকে আলাদা করা হয়। এ অবস্থায় প্রাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাসই বিশুদ্ধ মিথেন গ্যাস। যা পাইপ লাইনের মাধ্যমে সঞ্চালন করে ব্যবহার উপযোগী করা হয়।

অপরদিকে ভূগর্ভের কয়লার খনি থেকে খুব সহজেই মেশিনের সাহায্যে কয়লা উত্তোলন করা হয়। প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হলেও কয়লা উত্তোলনে তা প্রয়োজন হয় না। কয়লা উত্তোলনের জন্য দুটি পদ্ধতি আছে কিন্তু সাধারণত কয়লার স্তর ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি থাকে বলে কয়লা উত্তোলনে ওপেন পিট মাইনিং পদ্ধতি বেশি ব্যবহৃত হয়। মেশিন দিয়ে ভূগর্ভ থেকে কয়লা তোলার পর কনভেয়ার প্লান্ট দিয়ে সেগুলো প্রক্রিয়াকরণ প্লান্টে নেওয়া হয়। সেখানে কয়লায় থাকা অন্যান্য পদার্থ যেমন— ময়লা, শিলা কণা, ছাই, সালফার এগুলোকে পৃথক করে ফেলা হয় এবং কয়লাকে ব্যবহার উপযোগী করা হয়।

অতএব উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাস প্রক্রিয়াজাতকরণের মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস প্রক্রিয়াজাতকরণ একটি জটিল শিল্প প্রক্রিয়া।

সারকথা : কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাস প্রক্রিয়াজাতকরণের মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস প্রক্রিয়াজাতকরণ একটি জটিল শিল্প প্রক্রিয়া।

Leave a Reply